৬০-৭০ হাজার টাকায় মোটরসাইকেল কিনে যে বিপদে পড়তে পারেন
দেশের বিভিন্ন জেলা শহর, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দিকে গড়ে উঠেছে মোটরসাইকেল চোর চক্র। বিভিন্ন জায়গায় চুরি হওয়া দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল পৌঁছে যায় তাদের হাতে। পরে তা বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, লোভে পড়ে কম দামে এসব বাইক কিনলে বিপদে পড়তে পারেন ক্রেতা। আসামি হয়ে যেতে পারেন বাইক চুরি বা ছিনতাই মামলার।
জানা যায়, রাজধানী থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল যায় দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে। সেসব জেলা শহর কিংবা গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠেছে এসব চোরাই মোটরসাইকেল কেনার একটি চক্র। তারা এসব চোরাই বাইক বিক্রি করছে অনেক কাম দামে।
সম্প্রতি রাজধানী থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা চোর চক্র ও চোরাই মোটরসাইকেল কেনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পারেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীজুড়ে ৭০ থেকে ৭৫টির মতো মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্র তৎপর। এই চক্রের সদস্যরা এতটাই কৌশলী যে সিসিটিভি থাকার পরও পার্ক করে রাখা মোটরসাইকেলের লক খুলে কিংবা ভেঙে বাইক নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। চক্রের সদস্যরা এমন এক ধরনের চাবি বানাচ্ছে, যা দিয়ে যেকোনও বাইকের লক খোলা যায় অনায়াসে। এ ছাড়া স্বল্প সময়ের জন্য যারা রাস্তা কিংবা আশপাশে মোটরসাইকেল পার্ক করে রেখে যান, তারা অনেক সময় আলাদা কোনও তালা ব্যবহার করেন না। আর সে কারণেই শখের বাইকটি চোখের নিমেষেই নিজেদের করে নেয় চক্রের সদস্যরা।
সম্প্রতি তদন্তে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্র ও মাদক-সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের সূত্র ধরে একটি মোবাইল নম্বর আসে গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে। সেই মোবাইল নম্বরটির তথ্য বিশ্লেষণ করে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেন গোয়েন্দারা। পরে অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
রাজধানীর দক্ষিণ খান ও নোয়াখালী জেলার চাটখিল এলাকায় বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আলী, আনোয়ার হোসেন রুবেল, শামসুল হুদা, কামাল হোসেন ওরফে আকাশ ও মিজানকে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের নানা কৌশল ও ছিনতাইয়ের পর কোন কোন গন্তব্যে যায় এসব মোটরসাইকেল, সেসব তথ্য জানা যায়। ছিনতাই করা বাইক চলে যেতো দোহার, নবাবগঞ্জ, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সেখানেই চোর চক্রের সঙ্গে সমন্বয় থাকা ক্রেতারা গাড়িগুলো কিনে অন্যদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।
উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের যে পাঁচ সদস্যকে আমরা গ্রেফতার করেছি, সেই চক্রের আরও কয়েকজনের আমরা তথ্য পেয়েছি। পাঁচ জনের মধ্যে একজন চোরাই গাড়ির ক্রেতা রয়েছে। যে সবসময় চোর চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যাদের কাছে চোরাই গাড়ি পাওয়া যাবে, তাদেরও মামলায় পড়তে হবে। মোটরসাইকেল চুরি হলে সংশ্লিষ্ট থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।