অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া ৩ জনের বিষয়ে যা জানা গেল
ব্যাংকিং সংক্রান্ত গবেষণায় মৌলিক অবদানের জন্য চলতি বছর তিন অর্থনীতিবিদকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করেছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। এ তিন অর্থনীতিবিদ হলেন- বেন এস. বার্ন্যাঙ্কে, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ফিলিপ এইচ ডিবভিগ।
ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গবেষণা করায় চলতি বছর তাদের নোবেল দেওয়া হয়েছে।সোমবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টায় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে অ্যাকাডেমি।
কেন আমাদের ব্যাংক প্রয়োজন, ব্যাংকের তারল্য নিরাপত্তা ও কার্যক্রম গতিশীল রাখা এবং ব্যাংকের পতনজনিত কারণে অর্থনৈতিক সংকট— এসবই মূলত আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গবেষণার মূল বিষয়বস্তু। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে এই বিষয়ক গবেষণা শুরু হয়। বেন এস. বেরন্যানকে, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড এবং ফিলিপ এইচ ডিবভিগ আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাজার পর্যবেক্ষন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে তাদের বিশ্লেষণ ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে সোমবারের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল কাজ হলো জনগণের সঞ্চয়কে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল রাখা। কিন্তু এক্ষেত্রে যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংককে প্রথমেই যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয় তা হলো— সঞ্চয়কারী যে কোনো সময় তার সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নিতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে সঞ্চয়কারীকে তার অর্থ চাওয়া মাত্র ফেরত দেওয়া ব্যাংকের প্রধান শর্ত।
আবার অন্যদিকে—ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালারা ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা ঋণ নেওয়ার পর যে সময়ের মধ্যে তা শোধ করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন, সেই সময় আসার আগ পর্যন্ত তাদের চাপ না দেওয়াও ব্যাংকিং বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
কিন্তু যদি কোনো বিশেষ সময়ে ব্যাংকের আমানতকারীরা গণহারে তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে তোলা শুরু করেন, সেক্ষেত্রে একধরনের গুরুতর ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় এই সেই পরিস্থিতে ব্যাংকটি ধসে পড়ার অবস্থা পৌঁছে যায়।
ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড এবং ফিলিপ এইচ ডিবভিগ তাদের গবেষণায় এই চ্যালেঞ্জের সর্বোত্তম সমাধান নির্দেশ করতে পেরেছেন বলে মনে করে নোবেল কমিটি। তাদের গবেষণা বলছে, চরম সংকটে পড়লে সর্বশেষ উৎস হিসেবে সরকারের তরফ থেকে তহবিল দেওয়া হবে— এমন নিশ্চয়তা যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে দেওয়া হয়, সেটি ব্যাংকিং ব্যবস্থার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।
আর বেরন্যানকে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৩০ সালের বৈশ্বিক মহামন্দা নিয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য। আধুনিক ইতিহাসে ১৯৩০ সালের মন্দাকে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকট চলাকালে ব্যাংকের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ কীভাবে সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারে, সে বিষয়েও গবেষণা রয়েছে তার।
১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। পরে ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভেরিজ রিক্সব্যাংক অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রবর্তন করে। পরের বছর থেকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু করে।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের সম্মানে এই পুরস্কারের পুরো নাম রাখা হয় ‘আলফ্রেড নোবেল-এর স্মৃতি রক্ষার্থে অর্থনীতিতে ভেরিজ রিক্সব্যাংক পুরস্কার।’
গত বছরও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ৩ জন। তারা হলেন- ডেভিড কার্ড, জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস।
গত বছরের মতো এবারও পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৯ লাখ ডলার) ভাগ করে দেওয়া হবে তিন অর্থনীতিবিদকে। আগামী ১০ ডিসেম্বর তাদের পুরস্কারের অর্থ ও সনদ প্রদান করা হবে।