কিডনি ভালো রাখতে কী করবেন, কী করবেন না
সুস্থ থাকার জন্য কিডনির যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিডনি রোগ সকল বয়সের যে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে। পৃথিবীতে শতকরা ১০ জন মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। ৭৫ বৎসর বয়সের ৫০ শতাংশ মানুষ কমবেশি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতায় ভোগেন। আর ৬৫-৭৫ বয়সের প্রতি ৫ জনে একজন পুরুষ এবং প্রতি ৪ জনে একজন নারী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র রোগ এবং প্রতিনিয়ত আমাদের কিছু অনিয়মের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সাধারণত ৭০ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে বুঝতেই পারে না যে, সে এই ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। কিডনি ভালো রাখার জন্য সচেতন থাকতে হবে আমাদের। দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস ত্যাগ করা ও কিছু অভ্যাস গ্রহণ করা সুস্থ কিডনির জন্য খুবই জরুরি। জেনে নিন কী করবেন এবং কী করবেন না।
১। পরিমিত পানি পান করবেনক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান অ্যান্ড নিউট্রিশানিস্ট জান্নাতুন নূর নাঈমা জানান, একজন সুস্থ, স্বাভাবিক এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত ৮ থেকে ৯ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে। তবে মাত্রাতিরিক্ত পানি খাওয়া আবার শরীরের জন্য খারাপ।
২। লবণ কম খাবেনমানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। খাবারে অতিরিক্ত লবণ দেওয়া বা খাবারের সাথে আলাদা লবণ খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
৩। অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন পরিহার করুনখাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গরুর মাংস বা এই ধরনের প্রাণিজ আমিষ খেলে বা চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে খাবার তালিকায় রাখতে পারেন ডালজাতীয় প্রোটিন ও মাছ।
৪। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুনকিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুনডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের কিডনির কার্যকারিতা ও প্রস্রাবে মাইক্রো অ্যালবুমিন প্রতি ৬ মাস অন্তর পরীক্ষা করানো উচিত। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারোর কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।
৭। ওষুধ সেবনে সতর্ক হোনচিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা ঠিক নয়। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য হুমকিস্বরূপ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে নিয়ম না জেনে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৮. মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন সি খাবেন নামানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন নেই। তাই ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৯। কোমল পানীয় ত্যাগ করুনকোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংকস কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
১০। মাদক ত্যাগ করুনধূমপান ও মদপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়।
জেনে নিন
> অনেকক্ষণ ধরে প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখবেন না।> মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।> ডায়রিয়া, বমি ও রক্ত আমাশয়ের কারণে রক্ত, পানি ও লবণ শূন্য হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। তাই দ্রুত খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।> প্রস্রাবের ঘন ঘন ইনফেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।> রঙিন সবজি ও বেশি করে ফল খাবেন।> ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।