টুইটার পুরোপুরি বন্ধ হওয়া নিয়ে যা শোনা যাচ্ছে
বেশ কয়েক বছর ধরেই নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার। ইলন মাস্ক মালিক হওয়ার পর সে সংকট যেন আরও প্রকট হয়েছে। সম্প্রতি টুইটারে চলমান অস্থিরতা দেখে অনেকেই ভাবছেন, হয়তো খুব শিগগির পুরোপুরি বন্ধ হতে চলেছে পৃথিবীর শীর্ষ ধনীর মালিকানায় থাকা এ প্রতিষ্ঠান।
‘রিপটুইটার’ বা ‘শান্তিতে থাকো টুইটার’ এখন বহুল প্রচলিত হ্যাশট্যাগে পরিণত হয়েছে। এমনকি অনেক ব্যবহারকারীই টুইটার থেকে নিজেদের তথ্য সরিয়ে নিজের সংরক্ষণে রাখছেন। এমনকি টুইটারের অনেক গ্রাহকই অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে শিফট হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
টুইটারের শীর্ষ এক ব্যবহারকারী মার্টিন লুইসের ২০ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, তিনি নাকি টুইটার থেকে ম্যাস্টোডনে শিফট করছেন। যদিও লুইস নিজেই বলেছেন যে, ম্যাস্টোডন কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই তার।
এদিকে, ইলন মাস্ক এমন একজন মানুষ যিনি নিজেকে নিয়ে সমালোচনার বিপরীতেও মজা নিতে ভুল করেন না। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া টুইটারকে কবর দিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন একটি মেমে নিজেই টুইট করেন ইলন।
ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নেওয়ার এক সপ্তাহ পরেই প্রতিষ্ঠানটি থেকে অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই করেন। এদিকে, চলতি সপ্তাহেই ইলন টুইটার কর্মীদের জানান, তাদের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে কোম্পানি ছেড়ে চলে যেতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টুইটারের নতুন মালিক ইলন মাস্ক বলেছেন, বৃহস্পতিবারের (১৮ নভেম্বর) মধ্যে এ ধরনের চুক্তিতে সই করবেন না, তাদের তিন মাসের বেতন কাটা হবে। এ মেইল পাওয়ার পরে আরও অনেকেই টুইটার থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যারা চলে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিকে চালু ও কর্মক্ষম রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতেন।
অনেকের মতে টুইটারের সবচেয়ে বড় দুটি দুর্বলতা, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির অস্তিত্বকে বিপন্নতার মুখে ফেলতে পারে তা হলো- ১. হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা ও ২. নিজেদের সার্ভার না থাকা।
অনেকের মতে, এমন অস্থিরতা চলতে থাকলে টুইটার হ্যাকারদের ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হবে। কারণ বিশ্বনেতা, রাজনীতিবিদ ও তারকাদের প্রায় সবারই লাখ লাখ ফলোয়ার সমৃদ্ধ টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। হ্যাকারদের কাছে এসব আক্যাউন্ট আক্রমণের মক্ষম লক্ষ্যে পরিণত হতে পারে।
২১ শতকের বাস্তবতায় সাইবার-নিরাপত্তা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া একপ্রকার বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত সপ্তাহে টুইটারের সাইবার-নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান লিয়া কিসনার চাকরি ছেড়েছেন। এমন বাস্তবতায় টুইটার যে শিগগিরই বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের কবলে পড়বে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অনেকের মতে, যদিও ইলন এখন টুইটারের মালিক ও প্রধান নির্বাহী পদটির মর্যাদা উপভোগ করছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে যে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বাঁচতে টুইটারকে দেউলিয়া ঘোষণা করে দায়মুক্ত হওয়া ছাড়া তার কাছে আর কোনো উপায় নেই।
সূত্র: বিবিসি