জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পেলে
একদিন আগেই টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে নিজেই মেসেজ লিখেছিলেন। ভক্তদের আশ্বস্ত করে লিখেছেন, তার অবস্থা ভালো। ক্রিটিক্যাল বলার মতো অবস্থায় এখন আর নেই। কিন্তু একদিন পরই হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার, কালো মানিক পেলের।
কেমোথেরাপিতে কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। পরিস্থিতি এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বলা হচ্ছে তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গোল ডটকম লিখেছে, ‘মোভড টু অ্যান্ড অব লাইফ কেয়ার ইন হসপিটাল।’ এই এক শিরোনামেই বোঝা যাচ্ছে- একেবারে শেষ মুহূর্তে পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ তিনটি বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার।
ব্রাজিলের সংবাদপত্র ‘ফোলহা ডে সাও পাওলো’ জানিয়েছে, ক্যানসার নিরাময়ে নিয়মিত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, তাতে কোনো সাড়া দিচ্ছেন না পেলে। তাকে রাখা হয়েছে, প্যালিয়াটিভ কেয়ারে।’
সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তির পর আজ তার অবস্থা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত।’
কী এই প্যালিয়াটিভ কেয়ার?
ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘যখন রোগীর শরীরে কোনো চিকিৎসা কাজ করে না, তখনই তাকে প্যালিয়াটিভ কেয়ারে রাখতে হয়। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে উপসর্গ উপশম করা হয়। অর্থাৎ রোগীর শরীরে যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে তিনি যাতে কষ্ট না পান সে বন্দোবস্ত করেন চিকিৎসকরা। যতদিন সেই রোগী বেঁচে থাকবেন ততদিন যেন তিনি আরামে থাকতে পারেন তার জন্যই রয়েছে প্যালিয়াটিভ কেয়ার।’
তবে প্যালিয়াটিভ কেয়ারে কোনো রোগীকে রাখার মানে যে, তিনি কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করবেন, তাও নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই অবস্থায় রোগী এক বছরও বাঁচতে পারেন। সেটা নির্ভর করছে রোগীর শরীর কতটা সহ্য করতে পারছে তার ওপর।’
গত মঙ্গলবার হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ও শরীর ফুলে যাওয়ায় সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৮২ বছর বয়সী পেলেকে। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী মার্সিয়া আওকি এবং একজন পরিচারিকা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এর আগে বিভিন্ন কারণে পেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও শরীর ফুলে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জানা যায়, পেলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তার মেয়ে জানিয়েছিলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন পেলে; কিন্তু এর মধ্যেই নতুন করে তার অবস্থার অবনতি হওয়ার খবর পাওয়া গেল।
শুক্রবার রাতেই কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে যখন ব্রাজিল ক্যামেরুনের বিপক্ষে মাঠে নামে, তখন সেখানে ব্রাজিল সমর্থকরা পেলেকে স্মরণ করে তার বিশাল প্রতিকৃতি সম্বলিত পতাকা এবং তার জার্সি প্রদর্শন করেন। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তারা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কাতার বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই কি না পেলের জীবনের যাত্রা শেষ হয়ে যায়!
পেলের সুস্থতা কামনায় টুইট করেছেন ফ্রান্স ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপেও। তিনি ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে টুইট করে লেখেন, ‘প্রে ফর দ্য কিং।’
দীর্ঘদিন ধরে মলাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কোলনে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল; কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। এরপর থেকে কেমোথেরাপি চলছিল পেলের। সেটাই আর নিতে পারছেন না তিনি।
বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ২০১০ সালে কাতারের নাম ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন পেলে। ইচ্ছে ছিল ১৮ ডিসেম্বর দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বসে ব্রাজিলের ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জয় দেখবেন। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে কাতার যাওয়ার অনুমতি দেননি। তিনি ব্রাজিলে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। সেখানেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেন পেলে। ১৯৫৮ সালে যখন ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করে, তখন পেলের বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি।