মসজিদে হেলান দিয়ে ঘুমালে অজু ভাঙবে?

মসজিদ আল্লাহ তায়ালার ঘর। এটি নামাজ আদায়, জিকির-আজকার, তেলাওয়াত ও প্রভৃতি ইবাদতের বিশেষ স্থান। মসজিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। এতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও ঈমান-আমল উন্নত হয়। কেননা এটি একটি পবিত্র ও বরকতময় জায়গা। সুতরাং মুমিনদের কর্তব্য, মসজিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং একে জ্ঞান ও আলো, হেদায়েত ও সফলতার কেন্দ্র মনে করা।

হাদীস শরীফে এসেছে, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ ইমাম (বাদশাহ)। ঐ যুবক, যে তার প্রতিপালকের ইবাদতে লালিত-পালিত হয়। ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে (এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত)...। (বুখারী: ৬৬০; মুসলিম ১০৩১)

মসজিদ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছি যে, তোমরা উভয়ে আমার ঘরকে সে সকল লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকূ ও সেজদা করবে। (সূরা বাকারা: ১৬৫)

ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে, মসজিদের দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমানো আদব পরিপন্থী। এতে করে মসজিদের সম্মান নষ্ট হয়। আলেমদের মতে, একান্ত কেউ যদি মসজিদের দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমায়, তাহলে তার অজু ভাঙা না ভাঙার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো-

হেলান দিয়ে ঘুমানোর সময় যদি নিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হয় তাহলে নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী অজু ভাঙবে না। আর যদি নিতম্ব সরে যায়, তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবে। চাই তা মসজিদের দেয়াল হোক বা অন্য দেয়াল। (হিন্দিয়া : ১/১২, আল মুহিতুল বুরহানি : ১/৬৮, রদ্দুল মুহতার : ১/১৪৩, আহসানুল ফাতাওয়া : ২/২২-২৩, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৫৬)

মসজিদের আদব রক্ষার ক্ষেত্রে আলেমরা আরেকটি মাসআলার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে বলেন, তাহল- মসজিদে অধিক সাজ-সজ্জা ও জাঁকজমক করা নিষেধ। মুসল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয় এরূপ বস্তু সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে (বুখারী: ৫৯৫৯; মিশকাত: ৭১৮-১৯)। সুতরাং মিম্বার এমনভাবে তৈরী করা যাবে না, যা মুসল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয় এবং অপব্যয়ের শামিল হয়। শরীয়তে সরলতা পছন্দনীয়। সকল প্রকার বাড়িবাড়ি ও অপব্যয় পরিত্যাজ্য (সূরা আ‘রাফ: ৩১; ইসরা: ২৬-২৭)।

মসজিদের সৌন্দর্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করা ও এর কারুকার্যিতা নিয়ে অহংকার করা কেয়ামতের আলামত। নবীজি সা. বলেন, 'মসজিদসমূহ উচ্চ করে নির্মাণ করতে আমি আদিষ্ট হয়নি।' (আবু দাউদ: ৪৪৮, মিশকাত:৭১৮) বিশেষ করে ওয়াকফের সম্পদ দিয়ে তা করা সম্পূর্ণ হারাম। (ফাতওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ: ১৩/১৯২)

© Copyright 2024 - All Rights Reserved - by Jagobangla