শেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়: এক ভিসায় ঘুরে আসুন ২৭ দেশ
যারা দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেন তাদের কাছে ‘শেনজন’ শব্দটি পরিচিত। অন্যরাও হয়তো শেনজেন ভিসার নাম শুনে থাকবেন। ‘শেনজেন ভিসা’ অন্যসব দেশের ভিসা থেকে আলাদা। এই ভিসার মাধ্যমে ইউরোপের ২৭টি দেশ ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। শেনজেনভুক্ত যেকোনো একটি দেশের ভিসা সংগ্রহ করে বাকি ২৬টি দেশ অনায়াসে ভ্রমণ করা যায়। এজন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হয় না।
শেনজেনভুক্ত দেশের নাম অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি এবং ক্রোয়েশিয়া-এই দেশগুলো শেনজেন দেশ।
শেনজেন চুক্তি
১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের শেনজেন শহরে ইউরোপীয় দেশগুলো নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। দেশগুলোকে একীভূত করে নানা উন্নয়ন কার্য সম্পাদন করার উদ্দেশে এই চুক্তি হয়। এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয় ‘শেনজেন ভিসা’।
শেনজেন অঞ্চল
শেনজেন অঞ্চল বা শেনজেন এলাকা হলো ২৭টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত একটি এলাকা, যেখানে পারস্পরিক সীমান্তে সবধরনের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ প্রাপ্ত দেশসমূহ স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং বিচার নীতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই রকম হওয়ায়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইউভুক্ত দেশসমূহ একটি সাধারণ ভিসা নীতি মেনে চলে।
১৯৮৫ সালের শেনজেন চুক্তিতে এবং ১৯৯০ সালের শেনজেন কনভেনশনে অঞ্চলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরণ করা হয়। উভয় চুক্তি লুক্সেমবার্গের শেনজেনে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
শেনজেন অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। আয়তন ৪৩,১২,০৯৯ বর্গকিলোমিটার । প্রায় ১৭ লাখ মানুষ প্রতিদিন একটি অভ্যন্তরীণ ইউরোপীয় সীমান্ত পেরিয়ে কাজ করার জন্য অন্য দেশে যাতায়াত করে এবং কিছু অঞ্চলে এরা কর্মশক্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত গঠন করে।
প্রতি বছর শেনজেন এলাকায় মোট ১৩০ কোটি সীমান্ত পারাপার ঘটে থাকে। প্রতি বছর সড়কপথে ২ লাক ৮০ হাজার কোটি ইউরো মূল্যের ৫.৭ কোটি আমদানি-রফতানি সংগঠিত হয়।
ভৌগলিক অবস্থা, বাণিজ্য অংশীদার এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে শেনজেন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের ব্যয় ০.৪২% থেকে ১.৫৯% পর্যন্ত হ্রাস পায়। সেনজেন এলাকার বাইরের দেশগুলোও এ কারণে উপকৃত হয়। শেনজেন অঞ্চলের রাজ্যগুলি শেনজেনভুক্ত নয় এমন দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।
শেনজেন ভিসা
ইউরোপ তথা শেনজেন দেশগুলোতে পর্যটন কিংবা যেকোনও কাজে প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৯০ দিন অবস্থান করতে পারেন। এজন্য পেতে হয় শেনজেন ভিসা। এক ভিসাতেই ২৭টি দেশে বেড়ানো যায়। তাই এটি ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে আরাধ্য।
শেনজেন ভিসার মেয়াদ ৯০ দিনের। অর্থাৎ এ কয়দিনের মধ্যে বেড়ানো বা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউরোপ ঘুরে আসা যায়।
শেনজেনভুক্ত যেকোনো একটি দেশের ভিসা নিয়ে অন্যান্য দেশগুলোতেও ভ্রমণ করা যায়।
শেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়
শেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন ফর্ম আছে। গুগলে ইংরেজিতে শেনজেন ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম লিখে সার্চ দিলে এই ভিসার আবেদনের লিংক পাবেন। ভিসার জন্য আবেদন করুন এই লিংকে।
আবেদন ফর্মটি সতর্কতার সঙ্গে পূরন করতে হবে। দুই পাশের প্রতিটি ঘর পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে কোনো ঘর ফাঁকা থাকলে অথবা তথ্যে ভুল থাকা যাবে না। এমন হলে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে না। আবেদন ফরমের একটি কপি জমা দিতে হবে। আর ফর্মে অবশ্যই তারিখ ও স্বাক্ষর থাকতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে শেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়
২৭টি শেনজেনভু্ক্ত দেশের যে কয়টির দূতাবাস বাংলাদেশে আছে সেখানে যোগাযোগ করে শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। মনে রাখতে হবে শেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশের দূতাবাস থেকেই এই ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।
শেনজেন ভিসা ফি
শেনজেন ভিসা পাওয়ার স্ট্যান্ডার্ড ফি ৮০ ইউরো ডলার। এই ফি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। ছয় থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ভিসা ফি ৪০ ইউরো। ছয় বছরের নিচের শিশুদের ভিসা ফি লাগে না।