মৃতকে গোসল করানোর নিয়ম

মানুষের জন্ম-মৃত নির্ধারিত। কেউ চিরকাল এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে না। মৃত্যুর মতো ধ্রুব সত্যকে আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিন যেমন চিরন্তন বিশ্বাস করে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এমনকি স্রষ্টাকে মানতে না চাওয়া অবিশ্বসীরাদেরও অস্বীকারের সুযোগ নেই। মৃত্যুর মাধ্যমেই একদিন এই রঙ-রসে ভরা পৃথিবীর মায়াজাল ছাড়তে হবে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ -(সুরা নিসা, আয়াত, ৭৮)

কোনও মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার অবশ্যক হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দ্রুতই এই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কিফায়া। কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপর যদি ইন্তিকাল করে, তাকেও গোসল দিতে হবে এবং এটা ফরজ। আর যদি মৃতাবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে গোসল দেওয়া ভালো; তবে ফরজ নয়।

কোনো লাশ যদি লা-ওয়ারিস হয়, তাহলে তার গোসলের দায়িত্ব সব মুসলমানের। গোসল ছাড়া তার দাফন করা হলে, যারা জানে- তাদের সবাই গুনাহগার হবে।

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো সুন্নত পদ্ধতী

প্রথমে মৃতকে চৌকি বা গোসলের খাটিয়ার ওপর শোয়াতে হয়। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশে একটা কাপড় রাখতে হয়। হাতে কাপড় পেঁচিয়ে পেশাব-পায়খানার জায়গা পরিষ্কার করতে হয়। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পেশাব বা পায়খানা জাতীয় কিছু বের হলে গোসলদানকারী হাতে একটি নেকড়া বেঁধে নিয়ে মৃত ব্যক্তির পায়খানা ও পেশাবের স্থান ধুয়ে পরিস্কার করবে। নাভি ও হাঁটুর মাঝখানের স্থান ঢেকে নিয়ে পানি ঢালবে।

এরপর অজু করাতে হয়। নাকে ও মুখে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তুলা ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি ও নাকের ভেতর মুছে দেওয়া জায়েজ।

গোসল ফরজ বা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মারা গেলে মুখে ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরি। পানি যেন ভেতরে না যায় সে জন্য নাক, মুখ ও কানে তুলা দিতে হয়, এরপর ধুতে হয়।

মৃতকে বাঁ দিকে কাত করে শুইয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমনভাবে তিনবার পানি ঢালতে হয়, যেন বাঁ কাত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অনুরূপভাবে ডান কাত করে শুইয়ে তিনবার পানি ঢালতে হয়। এরপর মৃতকে কোনো কিছুর ওপর ঠেস দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে হয়।

কোনো মল বেরোলে পরিষ্কার করে ধুয়ে দিতে হয়। এর জন্য পুনরায় অজু ও গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। অতঃপর বাঁ কাত করে শুইয়ে কর্পূর মেশানো পানি ঢালতে হয় তিনবার। সব শেষে একটি কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/২১৮)

© Copyright 2024 - All Rights Reserved - by Jagobangla