যুক্তরাজ্যের ভিসা পাবেন যেসব উপায়ে
কাজ, পড়াশোনা কিংবা ভ্রমণের জন্য বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের শীর্ষ পছন্দের দেশ যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশেরও হাজার হাজার মানুষ প্রত্যেক বছর যুক্তরাজ্যে যান এবং অনেকে দেশটিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে স্বপ্নের এই দেশটির ভিসা পাওয়া যাবে। আজকের এই প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ধরনের ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এখানে ধাপে ধাপে সেসব প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
♦ কোন ধরনের ভিসা চান?যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা, কাজ, ভ্রমণের জন্য যেতে চাইলে আপনার ভিসার দরকার হবে। এছাড়াও দেশটিতে অব্স্থানরত আপনার পরিবারের সাথে মিলিত হতে চাইলেও ভিসার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া কোনোভাবেই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবেন না।
○ ভিসার ধরন নির্ভর করছে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর• আপনি কোন দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যেতে চান
• কেন যুক্তরাজ্যে যেতে চান
• আপনি কতদিনের জন্য দেশটিতে অবস্থান করতে চান
• আপনার ব্যক্তিগত অবস্থা এবং দক্ষতা
আবেদনের আগে আপনাকে অবশ্যই ব্রিটেনের সরকারের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিশ্চিত হতে হবে আসলে আপনার জন্য ভিসার দরকার আছে কিনা অথবা আপনার কোন ধরনের ভিসা দরকার। অনেক দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ অথবা ট্রানজিটের জন্য ভিসার দরকার হয় না।
দেশটিতে ভ্রমণে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার আবেদন অনুমোদন পেতে হবে। তবে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য আইরিশ নাগরিকদের ভিসার প্রয়োজন হয় না। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড অথবা লিচেনস্টাইনের বাসিন্দাদের জন্যও ভিসার প্রয়োজন নেই।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের পরিবারের কোনও সদস্য যদি ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাস শুরু করে থাকেন, তাহলে ভিসার আবেদনের পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিনামূল্যের সেটেলমেন্ট প্রকল্পের আওতায় আবেদন করতে পারবেন তারা।
♦ যদি যুক্তরাজ্যে ভ্রমণে যেতে চান...আপনাকে ৬ মাস মেয়াদের স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসা পাবেন যে শর্তে...
• ছুটি কাটাতে অথবা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে
• ব্যবসায়িক ভ্রমণ অথবা মিটিংয়ের জন্য
• সংক্ষিপ্ত মেয়াদের পড়াশোনার জন্য
আপনি যদি বিয়ে অথবা সিভিল পার্টনারশিপ নিবন্ধনের জন্য যুক্তরাজ্যে যেতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ‘ম্যারেজ ভিজিটর’ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
তবে ভিজিটর ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে আপনি কোনোভাবে কাজ করতে পারবেন না।
♦ ট্রানজিট ভিসা• আপনি যদি যুক্তরাজ্য হয়ে অন্য কোনও দেশে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে যুক্তরাজ্যের ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে।
যুক্তরাজ্যের ট্রানজিট ভিসার জন্য আবেদন করুন এখানে ক্লিক করে।
♦ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার ভিসাআপনার কোর্সের মেয়াদ, ধরন এবং পড়াশোনার স্থানের ওপর নির্ভর করবে কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
• স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসার মাধ্যমে আপনি দেশটিতে সংক্ষিপ্ত কোনও কোর্সে পড়াশোনা করার জন্য যেতে পারবেন। তবে এই ভিসার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হয় না।
• ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কোর্সের বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য আপনি সংক্ষিপ্ত-মেয়াদের স্টাডি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে যেতে পারবেন। এই ভিসার মেয়াদও সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১১ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে।
• শিক্ষার্থী ভিসা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ জন্য আপনাকে ব্রিটেনের লাইসেন্সকৃত কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পন্সরের প্রয়োজন হবে। আর এই ভিসার আওতায় আপনি দেশটিতে গিয়ে কিছু কিছু কাজ করারও অনুমতি পাবেন।
• ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য শিশু শিক্ষার্থী ভিসা দেয় যুক্তরাজ্য। আর এই ভিসা দেওয়া হয় কেবল তাদেরকে, যারা ব্রিটেনের স্বতন্ত্র কোনও স্কুলে পড়তে চায়। কারও বয়স ১৬ বছর বা তার বেশি হলে সে চাইলে এই ভিসায় দেশটিতে কিছু কাজ করতে পারবে।
♦ কর্ম ভিসাকর্ম ভিসার মাধ্যমে আপনি যুক্তরাজ্যে স্বল্প অথবা দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার অনুমতি পাবেন। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ধরনের কর্ম ভিসা রয়েছে।
আপনার কোন ধরনের কাজের ভিসা প্রয়োজন তা নির্ভর করছে :
• আপনার দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর
• আপনার যদি চাকরির অফার অথবা স্পন্সর থাকে
• আপনি পরিবারকে সাথে নিয়ে যেতে চান কিনা
• দেশটিতে আপনি কী করবেন— যেমন খেলাধুলা, দাতব্য বা ধর্মীয় কাজ
এছাড়াও আপনি দেশটিতে উদ্যোক্তা ভিসা অথবা উদ্ভাবক ভিসা নিয়ে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।
♦ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পরিবারের সাথে মিলিত হতে চাইলেআপনার স্বামী/স্ত্রী, সঙ্গী অথবা পরিবারের কোনও সদস্য; যার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অথবা সেখানে বসতি আছে, তাদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ফ্যামিলি ভিসার আবেদন করতে পারেন। তবে তারা আপনাকে আর্থিকভাবে সেখানে সহায়তা ও সমর্থন করতে পারবে এমন সক্ষমতার প্রমাণ দেখাতে হতে পারে।
আপনার পরিবারের সদস্য যদি যেকোনও একটি ভিসায় যুক্তরাজ্যে থাকেন, তাহলে তাদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন। তবে তাদেরকে অবশ্যই হতে হবে:
• আপনার স্বামী/স্ত্রী অথবা সঙ্গী/সঙ্গিনী
• যদি ১৮ বছরের কম বয়সী হয়, তাহলে তার বাবা-মা
আর এক্ষেত্রে আপনার কোন ধরনের ভিসার প্রয়োজন, তা জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে।
♦ শরণার্থীদের জন্য পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসানিজ দেশ ছাড়ার সময় আপনি যদি সঙ্গী/সঙ্গিনী অথবা সন্তান থেকে আলাদা হয়ে যান, তাহলে যুক্তরাজ্যে আপনার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য তারা আবেদন করতে পারবেন।
যদি আপনাকে আশ্রয় অথবা ৫ বছরের মানবিক সুরক্ষা দেওয়া হয় এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব না থাকে, তাহলে আপনার পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
♦ যুক্তরাজ্যে বসবাসের অনুমতির অন্যান্য উপায়○ কমনওয়েলথ নাগরিক• আপনার যদি ব্রিটিশ দাদা-দাদি অথবা নানা-নানি থাকেন এবং অন্যান্য যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করেন, তাহলে আপনি যুক্তরাজ্যে কাজের জন্য ‘পূর্বপুরুষ ভিসার’ আবেদন করতে পারবেন।
• যুক্তরাজ্যে বসবাসের জন্য আবাসস্থলেরও দরকার হতে পারে।
আপনি যদি কমনওয়েলথ নাগরিক হয়ে থাকেন এবং যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য আপনার অধিকারের প্রমাণ দেখাতে না পারেন, তাহলে উইন্ডরাস প্রকল্পের আওতায় আবেদন করতে পারবেন।
♦ অন্যান্য ভিসাএছাড়াও আপনার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে অন্যান্য ধরনের ভিসা দিয়ে থাকে যুক্তরাজ্য। আপনার যদি ভিসার প্রয়োজন হয় এবং এবং আপনি এই ভিসার যোগ্য কিনা তা জানতে এই লিঙ্কে প্রবেশ করুন।