লটারির টাকা কি হালাল?
লটারি অর্থ ভাগ্য পরীক্ষার খেলা। ইসলামে লটারি হচ্ছে জুয়ার একটি প্রকার। প্রত্যেক ওই লেনদেনকে জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত থাকে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৩৩৬) অর্থাৎ ইসলামে এমন কাজ বা লেনদেনকে জুয়া বলে যা ক্ষেত্রবিশেষে পুরোটাই লাভ বা পুরোটাই লোকসানের বাজির ওপর থাকে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃন্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। এতে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহ্র স্মরণে ও নামাজে বাঁধা দিতে চায়। অতএব তোমরা কি নিবৃত হবে? -(সূরা মায়িদা, আয়াত, ৯১-৯১ আয়াত)
লটারির ক্ষেত্রে অনেক লোকের অর্থ কোনও বিনিময় ছাড়াই লটারি কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। এ প্রকার লটারির টাকা গ্রহণ করা জায়েজ নয়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে (গ্রহণ করলে তা বৈধ)।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ২৯)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘লোক তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল উভয়ের মধ্যেই মহাপাপ ও মানুষের জন্য (যৎকিঞ্চিৎ) উপকারও আছে, কিন্তু ওদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত, ২১৯)
সুতরাং লটারি খেলা ও এর টাকা গ্রহণ হারাম কাজের অন্তর্ভুক্ত। আর প্রত্যেক বাজি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। এমনকি শিশুদের হারজিতের খেলাও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/১১৬, সুরা মায়েদা: ৯০-৯৩)
এছাড়াও যদি কেউ নিজের প্রয়োজনে কোনো পণ্য ক্রয় করে এবং এ কারণেই লটারির মাধ্যমে বিজিত হন, ওই পুরস্কার গ্রহণে শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই। অর্থাৎ লটারির উদ্দেশ্যে কোনো ইনভেস্ট নেই, কিন্তু কোম্পানি বা রাষ্ট্র প্রচারণার অংশ হিসেবে লটারির মাধ্যমে বিজিত ঘোষণার মাধ্যমে পুরস্কৃত করে, তা গ্রহণ করতে শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই। (হেদায়া: ৩/৫৯, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১৬৭)
এ প্রসঙ্গে ফিকহের কিতাবগুলোতে বলা হয়েছে— বৈধ পণ্য নিজ প্রয়োজনে ক্রয় করা হলে মালিকপক্ষ যদি লটারির মাধ্যমে পুরস্কার ঘোষণা করে, তা গ্রহণ করা শরিয়তপরিপন্থী নয়। পক্ষান্তরে পুরস্কার পাওয়ার আশায় পণ্য ক্রয় করা জুয়ার নামান্তর। এমতাবস্থায় ঘোষিত পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েজ নয়। (হেদায়া: ৩/৫৯, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১৬৭)