রাশিয়ার তেল ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ
রাশিয়ার ক্রুড অয়েলের (অপরিশোধিত তেল) নমুনা পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) টেকনিক্যাল কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের মতামত অংশে কমিটির সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান কাঠামোতে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব নয়।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এম বি এম আজাদ। বুধবার ( ২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ভবনে সাংবাদিকদের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, বিপিসি ১৯৭৭ সাল থেকে তার কাজ করছে। বর্তমানে এর পরিধি বেড়েছে। সে অনুযায়ী বিপিসি সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। সম্প্রতি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ল্যাবে রাশিয়ার ক্রুড অয়েলের নমুনা পরীক্ষা করেছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের ক্রুডের বিভিন্ন রকম ক্যাটাগরি। পৃথিবীর কোনো ক্রুডই খারাপ নয়। ক্রুড অনুযায়ী পরিশোধন করে বিক্রি করা হয়।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, রাশিয়া ক্রুড অয়েল বাংলাদেশকে দিতে চায়। তারাই পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে- এ ক্রুড আমাদের জন্য উপযোগী কি না। তারা নিজেরাই উৎসাহিত হয়ে আমাদের কাছে ক্রুড পাঠিয়েছে। আমাদের ল্যাবে (গবেষণাগারে) নিয়ম অনুযায়ী খুব টেকনিক্যালি হাই ক্লাস অফিসার দিয়ে ক্রুড পরীক্ষা করে দেখেছি।
তিনি বলেন, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করে অফিসাররা এ সিদ্ধান্তে এসেছেন, পরিশোধন করার জন্য রাশিয়ান ক্রুড অয়েল ইআরএলের মেশিনারিজের (যন্ত্রাদি) উপযুক্ত নয়। এ ক্রুডকে খারাপ বা নষ্ট বলার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এখানে না হলে অন্য জায়গায় এটি কাজে লাগবে। আমাদের ক্ষেত্রে রাশিয়ান ক্রুড প্রযোজ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি ৫৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড মেশিনারিজ দিয়ে চলে। প্রতিষ্ঠানটি এত দিনে নানাভাবে সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি এখন যে ক্রুড ব্যবহার করে, তা সৌদি আরব ও ইউএই থেকে সংগ্রহ করা হয়। দেশ দুটি থেকে সংগ্রহ করা ক্রুড ইস্টার্ন রিফাইনারির মেশিনারিজের উপযুক্ত। তাই এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান এম বি এম আজাদ বলেন, এখন আমাদের ১০টি সোর্স আছে। আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো তেল সংগ্রহ করতে চাই। একজনের ওপর নির্ভরতার অনেকগুলো খারাপ দিক আছে। ক্রুড অয়েলে আমরা চাই, আমাদের বিকল্প থাকুক। এ চিন্তা-ভাবনা থেকে আমরা নানা উৎস থেকে ক্রুড নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
দেশে বর্তমানে জ্বালানির কোনো সংকট নেই বলেও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন বিপিসি চেয়ারম্যান।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। ফলে ভারত, চীনসহ কোনো কোনো দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কেনা শুরু করে। গেল মে মাসে রাশিয়া বাংলাদেশকে ক্রুড অয়েল কেনার প্রস্তাব দেয়। ১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ান ক্রুডের নমুনা ইআরএলের পরীক্ষাগারে পৌঁছায়।