ছেলের প্রতি লোকমান (আ.) এর গুরুত্বপূর্ণ ১০ উপদেশ

লোকমান হাকিম। তার জ্ঞান-প্রজ্ঞার পরিচিতি-প্রসিদ্ধি জাহানজুড়ে। তাকে বিশেষ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করা হয়েছিল, যেমন খিজির আলাইহিস সালামকে দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তার কথাকে কোরআনে মানুষের নসিহত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার নামে পবিত্র কোরআনে একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। নিজের ছেলেকে দেওয়া তার উপদেশবাণী বিশ্বখ্যাত।

লোকমান (আ.) পুত্রকে দেওয়া ১০০টি উপদেশের ৪০টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তার ১০টি উপদেশ তুলে ধরা হল-

১. লোকমান (আ.) ছেলেকে বলেন, ‘হে বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মহা অন্যায়। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৩) মানবজীবনে তাওহিদই সব কাজের গ্রহণযোগ্যতা, বিশুদ্ধতার মানদণ্ড এবং পারলৌকিক মুক্তির শর্ত ও সোপান।

২. ‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে আমার প্রতি ও তোমার মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)

প্রণিধানযোগ্য, মানুষের বিকাশধারা থেমে যেত, যদি মাতা-পিতা সযত্ন প্রয়াসে প্রজন্মান্তরে মানবসত্তাকে মেলে না ধরতেন।

৩. লোকমান (আ.)-এর উপদেশ : ‘মাতা-পিতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞাত করবো।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৫)

৪. নামাজ সম্পর্কে লোকমান (আ.) বলেন, ‘হে বৎস, নামাজ কায়েম করো। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৭ (প্রথমাংশ)

৫. সন্তানকে নম্রতা ও বিনয়ের শিক্ষা দিয়ে লোকমান (আ.) বলেন, ‘সৎ কাজে আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ করো। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৭ (মধ্যাংশ)

৬. লোকমান (আ.)-এর উপদেশ : ‘বিপদাপদে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ। ’ (সুরা লোকমান : ১৭ শেষাংশ)।

৭. মানুষের দিক থেকে মুখ ফেরানো মনুষ্যত্বের কলঙ্ক। লোকমান (আ.)-এর উপদেশ : ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : (১৮ প্রথমাংশ)

আয়াতের মূল শব্দের মূল অর্থ : ‘উটের ঘাড় বাঁকানো’। মানুষও অহংকারের বশে ‘ঘাড় ত্যাড়া’ করে।

৮. অহংকার প্রসঙ্গে উপদেশ : ‘পৃথিবীতে গর্বভরে পদাচারণ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৮ (শেষাংশ)

অন্যত্র আছে, ‘ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি কখনোই ভূ-পৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭)

৯. লোকমান (আ.) সন্তানকে বিনয়ের উপদেশ দিয়েছেন : ‘পদচারণে মধ্যবর্তীতা অবলম্বন কোরো। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯ প্রথমাংশ)

১০. আকর্ষণীয় ভাষা মানুষকে বিমোহিত করে। লোকমানের (আ.) উপদেশ : ‘কণ্ঠ নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সুরা লোকমান : ১৯ (শেষাংশ)

© Copyright 2024 - All Rights Reserved - by Jagobangla