নামাজে ইমামের ভুল হলে মুক্তাদি কী করবেন
মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। জামাতে নামাজ আদায়ের সময় কখনও কখনও ইমামেরও ভুল হয়ে যেতে পারে। নামাজে ইমাম ভুল করলে মুসল্লিদের কর্তব্য লোকমা দিয়ে শুধরে দেওয়া। ইমামকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, তার ভুল হচ্ছে।
কীভাবে ইমামের লোকমা দিতে হয়, তা রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা শিখিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘একবার ইমামতির সময় রাসুল (সা.) চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে লোকমা দিয়েছেন।’ (নাসায়ি : ১/১৩২)।
লোকমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা উত্তম। তবে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে লোকমা দিলেও নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। আর ইমাম যদি কেরাত পড়ার সময় আটকে যান বা ভুল করেন, তা হলে মুক্তাদিদের কেউ সেই কেরাত ঠিক করে পড়ে ইমামকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া নিয়ম। (আহকামে যিন্দেগী : ২১৫)
তবে ইমাম যদি মুসল্লির লোকমা গ্রহণ না করে তাহলে নামাজের বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চান অনেকে। যেমন একজন প্রশ্ন করেছেন-
‘একদিন আসরের জামাতে ইমাম সাহেব ভুলে প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যান। মুসল্লিরা লোকমা দিলেও ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাত থেকে ফিরে আসেননি। বরং নামাজের শেষে সাহু সেজদা আদায় করেন। নামাজের পর কিছু মুসল্লি বললেন, যেহেতু ইমাম সাহেব লোকমা দেওয়ার পরও প্রথম বৈঠক ছেড়ে দিয়েছেন, তাই নামাজ হয়নি। প্রশ্ন হলো, তাদের কথা কি ঠিক?’
এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব না বসে ঠিকই করেছেন এবং ওই নামাজ সহিহ হয়েছে। আর মুসল্লিদের ওই কথা সঠিক নয়। কেননা, ইমাম প্রথম বৈঠক না করে ভুলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে মাসআলা হলো, বৈঠকের জন্য ফিরে আসবেন না এবং প্রথম বৈঠক ছুটে যাওয়ার কারণে নামাজ শেষে সাহু সেজদা করবেন। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যেহেতু সাহু সেজদাও আদায় করেছেন তাই ওই নামাজ আদায় হয়ে গেছে।
হজরত যিয়াদ ইবনে ইলাকা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন এবং দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন মুসল্লিগণ সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দিলেন। কিন্তু তিনি না বসে ইশারায় তাদেরকে দাঁড়িয়ে যেতে বললেন। এরপর নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে সাহু সেজদা আদায় করলেন এবং শেষে সালাম ফেরালেন।’ অর্থাৎ সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করলেন আর বললেন, রাসুল (সা.) এমনই করেছেন। (জামে তিরমিজি : ৩৬৫; আলবাহরুর রায়েক : ২/১০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১২৭)