ভূমিকম্পে নিহতদের আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন
ভূমিকম্প, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরগুলো বেদনাহত করে সবাইকে। দুর্ঘটনা কবলিত মৃত্যুর কারণে অনেক সময় প্রিয়জনের লাশ পর্যন্ত দেখতে পারেন না স্বজনরা। পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া প্রিয়জনের লাশ শেষ মুহূর্তে দেখতে না পারার কষ্ট শুধু মৃতের স্বজনরাই অনুভব করতে পারেন।
দুর্ঘটনা-মৃত্যু বেদনাহত করলেও এমন মৃত্যুর বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে সুসংবাদ রয়েছে। তিনি এমন মৃত্যুকে শহিদের মৃত্যু বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামে শাহাদাতের মৃত্যু সব থেকে মর্যাদার।
হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমন—১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৪. কুপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ (বুখারী শরীফ ২৮২৯.মুসলিম শরীফ ১৯১৪)
শহিদদের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না। -(সুরা বাকারা, আয়াত, ১৫৪)
অর্থাৎ, যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন, তাদেরকে শহিদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যান্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। শহিদদের জীবন অন্যান্য মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদাপূর্ণ।
তবে আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও মহামারী, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীরাও শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন।
আবদুল্লাহ ইবনে জাবের রা. তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাবা জাবের রা.-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তার কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
তখন মহানবী সা: বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ: ৩১১১)
হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, শহীদ ও বিছানায় মৃত্যুবরণকারী আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীর ব্যাপারে বিতর্ক করে। শহীদ বলে, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মতোই মৃত্যুবরণ করেছে, সুতরাং তাদের আমাদের মতো মর্যাদা দান করুন। আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীরা বলবে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মতো মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং তাদের আমাদের মতো সম্মান দেওয়া হোক।
আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও মহামারী, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীরাও শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন।
তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, মহামারীতে মৃত্যুবরণকারীদের আঘাতের দিকে তাকাও। যদি শহীদদের আঘাতের মতো তাদের আঘাত থাকে, তাহলে তারা শহীদের মর্যাদা পাবে। অতঃপর দেখা যাবে যে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীদের আঘাত শহীদদের আঘাতের মতো। ফলে তাদের শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে (মুসনাদ আহমদ, নাসারী, মিশকাত : হাদিস : ১৫৯৬)।