রাজধানীর গণপরিবহনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ই-টিকিটিংয়ে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে নভেম্বরের শুরুতে। এই ব্যবস্থা চালুর পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ায় বাস মালিক ও শ্রমিকদের এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে। ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চার্ট অনুযায়ী ই-টিকিটের ভাড়া নিশ্চিত করা, গাড়িতে টিকিট দেওয়া ও স্টপেজ ছাড়া বাস থামানো বন্ধ করার মতো বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয় এদিন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ই-টিকিটিং নিয়ে বাস মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বৈঠক করেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। এতে ঢাকার চারটি অঞ্চলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন পরিবহনের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং সাধারণ বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন তারা।
সূত্রমতে, ই-টিকিটিং নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। সেগুলো হলো- আগামী ১ নভেম্বর থেকে বিআরটিএ’র চার্ট অনুযায়ী ই-টিকিটের ভাড়া নিশ্চিত করা, স্টপেজের বদলে প্রতিটি গাড়িতে টিকিট দেওয়ার জন্য পজ মেশিন থাকা, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে টিকিট কাটার পজ মেশিনের প্রোগ্রামিং পরিবর্তন করে গন্তব্য শুরু ও শেষ হওয়ার ভিত্তিতে ভাড়া কাটার ব্যবস্থা করা, স্টপেজ ছাড়া মাঝপথে বাস থামানো এবং যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ করা এবং ১১ নভেম্বর আরও ১৬টি গাড়িকে এর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একজন প্রভাবশালী বলেন, বৈঠকে ই-টিকিটিংয়ের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যে আটটি পরিবহনে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেগুলোর বাস সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে তোপের মুখে পড়েন সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকদের প্রতিনিধিরা। এ সময় তারা জানান, ই-টিকিটিংয়ে লাভ কম হওয়ায় বাস বসিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। অনেক যাত্রী টিকিট না নিয়ে ভ্রমণ করছেন, সেই ভাড়া ড্রাইভার-শ্রমিকরা মেরে দিচ্ছেন। ফলে অনেক বাস মালিক দিনে ১৫০০-২০০০ টাকাও পাচ্ছেন না।
বৈঠকে বেশ কিছু নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ই-টিকিটিংকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমরা আজ বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে এর নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে শিগগিরই। এর ফলে সেবার মান আরও বাড়বে, যাত্রীরাও উপকৃত হবেন।
জ্বালানি তেলের দাম কমায় গত ৩১ আগস্ট গণপরিবহনের মালিকদের সঙ্গে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসে বিআরটিএ। পরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে ই-টিকিটিং চালুর ঘোষণা আসে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর কাছ থেকে। এই ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে সব বাসে বাধ্যতামূলক হবে বলেও জানান তিনি।
সে অনুযায়ী, বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে শেষমেশ ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে চারটি কোম্পানির বাসে ই-টিকিটিং চালুর উদ্যোগ নেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এতে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী কিলোমিটারপ্রতি সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নেওয়ার কথা বলা হয়। এটিকে শুরুতে অনেকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও এখন উল্টো ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। সেইসঙ্গে ভোগান্তি বেড়েছে উল্লেখ করে রীতিমতো ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।