‘ইনশা আল্লাহ, আগামী মাস থেকে এত কষ্ট থাকবে না’

জাগো বাংলা ডেস্ক প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২
‘ইনশা আল্লাহ, আগামী মাস থেকে এত কষ্ট থাকবে না’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথা ছিল ঘরে ঘরে আলো জ্বালবো। আমরা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেল কিনতে অসুবিধা হচ্ছে, গ্যাস আনতে অসুবিধা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ না, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি— সব জায়গায়; তারাও তো জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে নজর দিচ্ছে। তারা নিজেরাই তো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানেও কিছুদিনের জন্য আমাদের কষ্ট পেতে হয়েছে। ইনশা আল্লাহ, হয়তো আগামী মাস থেকে এত কষ্ট আর থাকবে না।’

শনিবার (১৯ নভেম্বর) গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনে যতটুকু স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি আমলের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যখন জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠন করে, তারপর থেকে দেশে হত্যা, খুন, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং— এমন কোনও অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। ২০০১ সালের নির্বাচন অথবা মাগুরা, মিরপুর বা ঢাকা-১০-এর উপনির্বাচনের কথা যদি কেউ স্মরণ করে, তাহলে বিএনপির আমলে নির্বাচনের নামে কী হতো, সেটা ওইটুকুই যথেষ্ট, যদি দেখেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কথাই ছিল ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। ভোটের বাক্সে সিল মারা থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম হতো। তার জন্য আমরা স্বচ্ছ ভোটার বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছি। কারণ বিএনপি ২০০৬-এ নির্বাচন করতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে তালিকা করেছিল। অবশ্য তাদের মুখে এখন খুব গণতন্ত্রের কথা শোনা যায়। তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে প্রকৃত গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক অধিকার এ দেশের মানুষের ছিল না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সরকারে আসার পর থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করি।’

আওয়ামী লীগের সময় অন্য দলগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সময় সব দলই কিন্তু তাদের দল করার সুযোগ পাচ্ছে। সে ব্যবস্থাটা আমরা দিয়েছি।’

বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। খালি চোখে দেখে না আমাদের দেশের কিছু মানুষ। তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তাদের গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে ভালো লাগবে না। তাদের ভালো লাগে অগণতান্ত্রিক কিছু হলে, কারণ তাদের মূল্য বাড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সেই খেলাই খেলতে চায় তারা বারবার এবং সেই খেলা চলেছে দীর্ঘদিন। ২০০৮ নির্বাচনের পর একটানা গণতান্ত্রিক ধারা আছে বলেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বে আবার সেই মর্যাদা পেয়েছে।’

দেশের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সমালোচনা, এটা-সেটা শুনতে হয়। এত কষ্ট করে, দিনরাত পরিশ্রম করে আজ বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি, তা বাইরের লোকেরা দেখে। কিন্তু আমাদের দেশের ভেতরের কিছু লোক জীবনেও দেখে না, তারা দেখবেও না। অন্য সরকার থাকলে তাদের অনেক সুবিধা থাকে।’

রিজার্ভ নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হঠাৎ করে কেউ কেউ পারদর্শী হয়েছে, রিজার্ভ নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। করোনাকালে আমাদের আমদানি হয়নি, কেউ বিদেশে যেতে পারেনি, কোনও রকম খরচ ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা প্রবাসে যারা...যেহেতু কেউ বিদেশে যেতে পারেনি, হুন্ডি ব্যবসাও ছিল না, একেবারে সরকারিভাবে সব টাকা এসেছে। ফলে আমাদের ভালো ফান্ড আসে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যেটা তিন মাসের খাবার আমদানি করারও পয়সা হতো না।’

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারপরও আমি বলবো, তেল-পানি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। তার প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত না।’

সবাইকে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ, খুবই ভয়ানক অবস্থা। সেখানে আমরা যে এখনও চলছি, আমাদের নিজেদের উৎপাদন নিজেরা বাড়াতে পারলে কোনও দিন দুর্ভিক্ষের আঁচ বাংলাদেশে লাগবে না। এটা হলো বাস্তবতা। আমাদেরটা আমাদেরই করে নিতে হবে।’

দেশে প্রয়োজনের চেয়ে উৎপাদন বেশি জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যেমন উপায় করছি, খরচা করছি। আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। যেটা আমাদের প্রয়োজন, তার থেকে বেশি উৎপাদন করছি। তারপরও আমরা আরও খাদ্য সব সময় মজুত রাখি আপৎকালের জন্য। যেন আমার দেশের মানুষের কোনও রকম কষ্ট না হয়।’

মানুষের কল্যাণে চিকিৎসাসেবায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনা পয়সায় দিয়ে দিচ্ছি। প্রাথমিক চিকিৎসা সেখানে পাচ্ছে। কবে কে করেছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এত কাজ? এতবার তো ক্ষমতায় ছিল সবাই। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ছিল; কোথায় মানুষের কল্যাণে তারা তো কখনও করেনি! করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই করে।’

করোনার সময় টিকা আনা, টিকা দেওয়ার জন্য সরকারের অর্থ ব্যয়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা বিনা পয়সা করে দিয়েছি। সেখানে টাকা খরচ হয়নি?’

স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সরকারের অর্থ ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব আমরা বিনা পয়সায় নিজেদের টাকায় দিয়েছি। প্রতিটা টাকা খরচ করেছি মানুষের জন্য। পানির মতো আমরা টাকা খরচ করেছি। এখানে কখন কোন নিয়ম মেনে করতে হবে, অত দেখার সময় আমাদের নাই। এটা জরুরি, আমাদের ওষুধ কিনতে হবে।’

বিমান পাঠিয়ে করোনা টিকা, টিকা দেওয়ার সিরিঞ্জ আনা এবং পরবর্তী সময়ে সংরক্ষণ ও টিকা দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই খরচগুলোর দিকে কি কারও একটু নজর আছে? পত্রপত্রিকা, এতগুলো মিডিয়া— সবাই একই কথা বলে বেড়ায়। তারা কি কখনও খুঁজে দেখেছে কী কী খরচ, কীভাবে আমরা করেছি? ওই দুর্নীতি, দুর্নীতি, এটা-সেটা, টাকা গেল কোথায়? টাকা তো সব মানুষের জন্য খরচ হয়েছে!’