ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সাধারণত নিরাপত্তা বহর ছাড়া জনসম্মুখে যেতেন না। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন একটি জায়গাতেই- সেটি হলো ঘোড়দোড় প্রতিযোগিতা। এই একটি জায়গাতেই তিনি মিশে যেতে চাইতেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। উল্লাসে মেতে উঠতেন রানি হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষের মতো।
২০১৩ সালের ঘোড়া দৌড়ের গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলো রানির ঘোড়া ‘এসটিমেইট’- সেবার বিজয়ীও হয়েছিলো রানির ঘোড়া। প্রতিযোগিতা চলাকালে তার ভেতরে ছিলো প্রবল উচ্ছ্বাস এবং উত্তেজনা। রানি ঘোড়া বিজয়ী হওয়ার পর রানির উচ্ছ্বাস দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন মাঠের দর্শকরাও।
ঘোড়ার প্রতি রানির এই দুর্বলতার শুরুটা হয়েছিলো ছোটবেলাতেই। তার বয়স যখন ষোলো প্রথম গিয়েছিলেন রেসিং ঘোড়ার আস্তাবলে। বাবা ষষ্ঠ জর্জ নিয়ে গিয়েছিলেন তাকে। রেসিং ঘোড়ার বিশেষ জাত ‘বিগ গেইম’ ও ‘সান চ্যারিয়ট’ মুগ্ধ করে তাকে। সেবার সেই ঘোড়াগুলো কিছু কসরত প্রদর্শন করেছিলো তার সামনে। তিনিও তখন খুশি হয়ে ঘোড়াগুলোর ঘাড়ে আর গলায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়েছিলেন। কথিত আছে যে, ঘোড়ার রেশমি পশমে হাত বুলিয়ে তার এতোই ভালো লেগেছিলো যে তিনি নাকি সারাদিন হাত-ই ধোননি।
রানি হিসেবে ১৯৫৩ সালে অভিষেকের পর নানা প্রতিযোগিতায় তার ঘোড়া জয়ী হয়েছিলো। যদিও ঘোড়ার একক মালিক হিসেবে ঘোড়দোড়ে রানিকে সবচেয়ে বড় সাফল্য এনে দিয়েছিলো ‘এসটিমেইট’। মজার বিষয়- রানির ঘোড়াগুলোর বেশিরভাগ জাতগুলো নিজের মতো পছন্দ করে নিতেন। রানির ঘোড়া প্রীতির জন্য সারা পৃথিবীর ঘোড়া প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীরা শোক প্রকাশ করেছেন। রানি নেই কিন্তু এখনো রয়ে গেছে রানির ঘোড়াগুলো। নিশ্চিত করে বলা যায়- আজীবন রানিকে খুঁজে যাবে তার প্রিয় ঘোড়াগুলো।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সুদীর্ঘ জীবনে তোলা বেশ কয়েকটি ছবিতেই ছোট পা ওয়ালা একটি কুকুরকে বসে থাকতে দেখা গেছে। চারটি কুকুর ছিল রানির অধিকাংশ সময়ের ‘বন্ধু’। রানির মৃত্যুর পর এখন তার পোষা প্রিয় কুকুরগুলোকে নেওয়া হবে নতুন ঠিকানায়। রানির কুকুরগুলোর মধ্যে ছিলো ‘মুইক’ ও ‘স্যান্ডি’ নামে দুটি পেমব্রোক ওয়েলশ করগি। এছাড়া অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের করগির শংকর ‘ক্যান্ডি’ আর রেশমি লোমবিশিষ্ট বড় কানের আদরের কুকুর ‘লিসি’।
রাজপরিবারের বায়োগ্রফার ও ম্যাজেস্টি ম্যাগাজিনের সম্পাদক জো লিটল মনে করেন, কুকুরগুলোকে প্রিন্সেস অ্যান ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কাছে দত্তক দেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাসাদকর্মীদের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। তার মতে, আগে প্রিন্সেস অ্যানের নিজের করগি কুকুর ছিলো। ডিউক অব ইয়র্ক এবং তার মেয়েদের কাছ থেকেই নতুন দুটি কুকুর এনেছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, রানির কুকুরগুলোকে আলাদা করা হবে না। এলিজাবেথের কুকুর প্রেম নতুন নয়। শৈশবে বাবা ষষ্ঠ জর্জের কুকুর ‘ডুকি’কে নিয়ে ছিল তার মাতামাতি। ১৯৪৪ সালে অষ্টাদশ জন্মদিনে তিনি উপহার পান পেমব্রোক ওয়েলশ করগি কুকুরছানা, সেটির নাম দেওয়া হয় সুসান। এই কুকুরটির প্রতি রানির এমনই মায়া ছিল যে ১৯৪৭ সালে মধু চন্দ্রিমাতে যাওয়ার সময়ও সুসানকে ছাড়েননি তিনি। রানির পোষা সেই প্রাণিটির মৃত্যু হয়েছিলো ১৯৫৯ সালে।
সূত্র:বিবিসি ও সিএনএন