নামাজের মূল হলো মনোযোগ ও উপস্থিতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫০; মুসলিম, হাদিস: ৮)
মানুষের মন কখনো স্থির থাকে না। নামাজে দাঁড়ালে শয়তান নানা দিক থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করে। তাই নামাজের পুরো সময়টায় চেষ্টা করতে হবে মনকে আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভূত রাখতে- মনে মনে বারবার স্মরণ করতে হবে, ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন।’
নামাজের প্রতিটি অবস্থান পরিবর্তনের আগে- দাঁড়ানো থেকে রুকু, রুকু থেকে সেজদা, সেজদা থেকে বসা- এই চিন্তাটা টিকে আছে কি না তা যাচাই করা উচিত। মনোযোগ সরে গেলে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এই প্রশিক্ষণ ধীরে ধীরে খুশু বাড়াতে সাহায্য করবে।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সঙ্গে) দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যেই নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ (নাসায়ি, হাদিস: ১৫১; বুখারি, হাদিস: ১৯৩৪)
নামাজে থাকা অবস্থায় কারো কথা বা প্রশ্নের উত্তরে হাত বা মাথা দিয়ে ইশারা করলে নামাজ নষ্ট হয় না- ফিকহের দৃষ্টিতে এটি ভঙ্গের কারণ নয়। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের ইশারা করা ঠিক নয়, কারণ তা নামাজের খুশু নষ্ট করে এবং মনোসংযোগ ব্যাহত করে।
কোরআন ও হাদিসে নামাজে পূর্ণ মনোযোগ বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অঙ্গভঙ্গি বা ইশারা-ইঙ্গিত করা থেকে বিরত থাকা উত্তম।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা- মুমিনের বৈশিষ্ট্য
কোরআনে উল্লেখ আছে, নামাজকালে যারা নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রেখে খুশু বজায় রাখে, তাদেরকে প্রকৃত মুমিন বলা হয়েছে।
হজরত আবু যর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- “নামাজরত ব্যক্তি যতক্ষণ এদিক সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে ততক্ষণ আল্লাহর (বিশেষ) রহমত তার প্রতি থাকে। আর যখন সে অন্য দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তখন আল্লাহর (বিশেষ) রহমত তার থেকে সরে যায়।” (সুনানে আবু দাউদ ১/১৩১)
তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহ.) এক ব্যক্তিকে নামাজে দাঁড়িয়ে দাড়িতে হাত দিতে দেখে বলেন- “তার অন্তরে যদি খুশু থাকত তবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির থাকত।” (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৬৬, হাদিস: ৩৩০৮)