দুরুদ শরিফ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে স্মরণ ও ভালোবাসায় ডাকার এই সওগাত শুধু ইবাদতই নয়, বরং আত্মাকে পবিত্র করার এক অনুপম মাধ্যম। কোরআন কারিমে আল্লাহ নিজেই নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয় রাসুলের (সা.) ওপর দুরুদ পাঠ করতে; ফেরেশতারা পর্যন্ত নিয়মিত দুরুদ পেশ করেন। তাই মুসলমানের জীবনে দুরুদ শুধু নেক আমল নয়, বরং ঈমান ও আনুগত্যের অকাট্য পরিচয়। প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝেও কয়েক মুহূর্ত দুরুদ পাঠ হৃদয়কে করে শান্ত ও পবিত্র। এখানে উল্লেখ করা হলো এমন ১০টি দুরুদ, যা যুগে যুগে আলেম, সুফি ও সাধারণ মুসলিমেরা আমল করে আসছেন।
১. দুরুদে ইবরাহিম
সর্বাধিক পরিচিত দুরুদ হলো দুরুদে ইবরাহিম
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়াআলা আালি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়াআলা আালি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়াআলা আালি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়াআলা আালি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।”
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যেমন ইবরাহিম ও তাঁর পরিবারকে রহমত করেছেন, তেমনি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারকে রহমত করুন। আর যেমন ইবরাহিম ও তাঁর পরিবারকে বরকত দিয়েছেন, তেমনি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারকে বরকত দিন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও মহান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩৭০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০)
২. সংক্ষিপ্ত দুরুদ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়াসাল্লিম।”
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩১৪)
৩. দুরুদে সালাম
উচ্চারণ: “আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।”
অর্থ: হে নবী, আপনার ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৮৩১)
৪. দুরুদে উম্মি নবী
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি।”
অর্থ : হে আল্লাহ! উম্মী নবী মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হাদিস: ১৬৫৪)
৫. দুরুদে বারাকাহ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়াআলা আালি মুহাম্মাদ, ওয়াবারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়াআলা আালি মুহাম্মাদ।”
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারে রহমত করুন এবং বরকত দিন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৯৯১)
৬. দুরুদে আবরার
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়াসাল্লি আলাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা।”
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন এবং সব মুমিন ও মুসলিমদের ওপর রহমত করুন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৯০৩)
৭. দুরুদে মাসনূন
উচ্চারণ: “সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ।”
অর্থ: আল্লাহ মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। (সুনান নাসায়ী, হাদিস: ১৭৪৬)
৮. দুরুদে কামিল
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন তিব্বিল কুলুবি ওয়া দাওয়াইহা, ওয়া ‘আফিয়াতিল আবদানি ওয়া শিফাইহা, ওয়া নূরিল আবসারি ওয়া জিয়াইহা, ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লিম।”
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের নেতা মুহাম্মদের ওপর রহমত করুন, যিনি অন্তরের আরোগ্য ও রোগের প্রতিকার, শরীরের সুস্থতা, চোখের আলো ও উজ্জ্বলতার উৎস। তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের ওপরও রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। (দালাইলুল খাইরাত, প্রকাশনী: দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০১৫, পৃ. ৪৫)
৯. দুরুদে মাকাম মাহমুদ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আনজিলহুল মাক্বআদাল মুকাররাবা ইন্দাকা ইয়াওমাল কিয়ামাহ।”
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মদের ওপর রহমত করুন এবং কিয়ামতের দিনে তাঁকে আপনার নৈকট্যপ্রাপ্ত উচ্চ আসনে বসান। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৯৯১; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৭২৫৯)
১০. দুরুদে আনওয়ার
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা নূরিল আনওয়ার, সির্রিল আসরার, তিরইয়াকিল আগইয়ার, মিফতাহি বাবিল ইয়াসার, সাইয়্যিদিল আবরার।”
অর্থ: হে আল্লাহ, আলোসমূহের আলো, রহস্যসমূহের রহস্য, বিপদের ওষুধ, সহজতার দরজার চাবি, সৎ ব্যক্তিদের নেতা মুহাম্মদের ওপর রহমত করুন। (দালাইলুল খাইরাত, প্রকাশনী: দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০১৫, পৃ. ৬২)
ছোট দুরুদ যেমন “সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ” সহজেই যেকোনো কাজের ফাঁকে পড়া যায়। আর দীর্ঘ দুরুদ যেমন দুরুদে ইবরাহিম, নামাজে এবং বিশেষ ইবাদতের সময়ে পড়া যায়। জুমার দিন শুক্রবার দুরুদ পাঠ বেশি করার নির্দেশও হাদিসে এসেছে (সুনান নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭৪)।