কবর জিয়ারাত ইবাদত। পরকালের কথা স্মরণ রাখতেও কবর জিয়ারত করা জরুরি। আবার গোনাহমুক্ত জীবন গড়তেও কবর জিয়ারত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত ও কাজ। জিয়ারতকারীকেও ক্ষমা করা হবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।
ইসলামের প্রথম যুগে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হলেও পরে তা তুলে নেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে কবর জিয়ারতের অনুমতি। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম; এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কেননা তা দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ‘ (ইবনে মাজাহ)
কবর জিয়ারতের দোয়া
কবরের পাশে গিয়ে দোয়া পড়া, কবরবাসীর মুক্তির জন্য দোয়া করা। নিজেদের জন্যও দোয়া করা উত্তম। কবর জিয়ারত করতে গিয়ে হাদিসে বর্ণিত এ দোয়া পড়া-
- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ اِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ
উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।’ (মুসলিম)
- দরুদ শরিফ পড়া।
- সুরা ফাতিহা পড়া।
- সুরা ইখলাস পড়া।
- আয়াতুল কুরসি পড়া।
অতঃপর মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফেরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
কবর জিয়ারতের জন্য জুমআর দিন উত্তম এবং সুন্নাত। জুমআর দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমা লাভের কারণ। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমআয় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত)
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করা
প্রিয়জন তথা বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনের কবরের পাশে গেলে মনের অজান্তে চোখে পানি চলে আসা স্বাভাবিক। কবরের কাছে গিয়ে হাহুতাশ কিংবা মাতম করা ঠিক নয়।তা সাধারণত নারীরাই বেশি করে বিধায় নারীদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মাজানের কবর জিয়ারত করতে যান। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁদলেন এবং তাঁর সঙ্গীরাও কাঁদল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে, আমার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ)
মনে রাখতে হবে
কবরের কাছে গিয়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, শিরক কিংবা বিদাআতের পর্যায়ে চলে যায়। তাহলো-
- কোনোভাবেই কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু কামনা করা যাবে না।
- কবরের মাটি ছুঁয়ে সালাম বা সেজদা করা যাবে না।
- এমনকি কবরে মানত বা দান-খয়রাত তথা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ডিম দেয়া যাবে না।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী কবর জিয়ারতকারী ও তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারীদের এবং তাতে বাতি জ্বালানো ব্যক্তিদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কবর জিয়ারতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।