সাধারণ মুসলমানদের জীবনের সব কিছুতে আল্লাহর বিধান, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা মেনে চলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে একটি দল বা জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন উপমহাদেশের একজন আলেম। তার নাম মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবি রহ.।
ইসলামের মৌলিক বিষয়, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান ও নামাজ- যা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর প্রতিদিন, সবসময় ফরজ, তার ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হয় এখানে।
আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান ছাড়া কেউ মুসলমান হওয়ার অধিকার রাখে না। নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সময়মতো প্রতিদিন ফরজ। কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা মানুষের হিসাব নেওয়া শুরু করবেন নামাজের মাধ্যমে। নামাজের হিসাব ঠিকমতো দিতে পারলে মানুষ সামনে আগ্রসর হতে পারবে। অন্যথায় অন্যসব হিসাব পর্যন্ত যেতে পারবে না কেউ।
ঈমান, নামাজের পর রোজা, হজ, জাকাতের মতো ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো বছরের নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য ফরজ।
কিন্তু অনেক মানুষই ইসলামের মৌলিক বিষয় ঈমান ও নামাজের প্রতিই অবহেলা দেখিয়ে থাকে। যা তার ওপর প্রতিদিন, সবসময় ফরজ। অন্য তিনটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি খেয়াল করার বা গুরুত্ব দেওয়ার অবকাশ তো থাকেই না অনেকের জীবনে।
ইসলাম, আমল ও ঈমানের প্রতি মানুষের এমন অবহেলা দেখে ব্যথিত হতেন ১৮৮৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের কান্ধলায় জন্মগ্রহণ করা মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবি রহ.। তিনি মুসলিমদের এমন দুরাবস্থা দেখে সব সময় নিজের ভেতর অস্থিরতা অনুভব করতেন।
কথিত আছে, রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় ছটফট করে উঠতেন তিনি অনেক সময়। এ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী জানতে চাইতেন, আপনার শারীরিক কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা?-তিনি সহধর্মীণীকে বলতেন, আমি যা অনুভব করি তুমিও তা অনুভব করলে বিছানায় আরামে ঘুমাতে পারতে না।
মাওলানা ইলিয়াস রহ. ভারতের মেওয়াত অঞ্চলে প্রায় ১০টি মক্তব পরিচালনা করতেন। তার মক্তবকে কেন্দ্র করে সেই এলাকায় কয়েকশত মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে শিশুরা ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করতো।
কিন্তু ১৯২৪ সালে হজ থেকে ফিরে এসে মাওলানা ইলিয়াস রহ. খেয়াল করলেন, মাদরাসার মাধ্যমে অনেক শিশুই ইসলাম সম্পর্কে জানছে-পড়াশোনা করছে তবে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসছে না। তারা ধর্মীয় বিষয়ে একদম বেখবর।
তিনি ভাবলেন, শিশুরা পড়াশোনার জন্য মাদরাসায় আসছে, এখান থেকে শিখছে। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের তো এভাবে ক্লাসে বসে ইসলাম শেখার সময় ও সুযোগ এখন আর নেই। তাদেকে কিভাবে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সেখানো যায় এবং এসব মানতে আগ্রহী করা যায়!
এমন ভাবনা থেকে মাওলানা ইলিয়াস রহ. সিদ্ধান্ত নিলেন, মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে, তাদের ইসলাম সম্পর্কে, আল্লাহর বিধান মানার বিষয়ে বুঝানোর এবং ইসলামের বুনিয়াদী (মৌলিক) বিষয় জানানোর পদ্ধতি বের করতে হবে।
এ সময় মেওয়াতে এক বিশাল ইসলাহি ইজতেমার আয়োজন করা হয়। তিনি সেখানে গিয়ে শ্রোতাদের বয়ান করেন। তিনি তাদের জামাত নিয়ে আশপাশের গ্রামে বের হওয়ার আহ্বান করেন। এর এক মাস পর মেওয়াতের পার্শ্ববর্তী গ্রামে প্রথম জামাত বের হয়।
তারা সিদ্ধান্ত নেন পরের জুমা সোনা মসজিদে আদায় করবেন। ইলিয়াস রহ. সেখানে আগমন করেন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ নসিহত করেন ও দিকনির্দেশনা দিতে থাকেন।
এভাবে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু হয় এবং মেওয়াতের অনেক জামাত বিভিন্ন এলাকায় বের হতে থাকে। তিনি প্রতি জুমার নামাজের পর তাদের কারগুজারি শুনতেন, নতুন জামাতের পরিকল্পনা করতেন এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতেন।
এরপর আলীগড়, দিল্লি, বুলন্দশহর, কান্ধলা, সাহারানপুর প্রভৃতি অঞ্চলে তাবলিগের জামাত প্রেরণ শুরু করেন। ইলিয়াস রহ.-এর ১৮ বছরের দিন-রাতের নিরলস পরিশ্রম আলোর মুখ দেখতে থাকে। হিন্দুস্তানের দূর-দূরান্তে জামাত রওনা হওয়া শুরু করে। এভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো মানার প্রতি আগ্রহ এবং দীনি চেতনার আবহ তৈরি হয়।