সব রাগ খারাপ নয়। কখনো কখনো রাগ প্রশংসনীয় আর কখনো নিন্দনীয়। যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ করা হয় এবং অন্যায় ও হারাম কাজ প্রতিরোধে রাগ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা প্রশংসনীয়। বরং অন্যায় দেখে মনে রাগ সৃষ্টি হওয়া মজবুত ঈমানের আলামত। পক্ষান্তরে ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী ছোট-খাটো বিষয়ে রাগ করা নিন্দনীয়। নিন্দনীয় রাগ দমনের কতিপয় উপায় তুলে ধরা হলো-
১. দোয়া করা
আল্লাহই সকল বিষয়ের তাওফিক দাতা, সঠিক পথে পরিচালনাকারী, দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ তাঁর হাতেই। আত্মা বিনষ্টকারী যাবতীয় অপবিত্রতা থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তিনিই একমাত্র উত্তম সাহায্যকারী। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফের : আয়াত ৬০)
তাই কঠিন রাগের সময় আল্লাহর সাহায্য চাইলে তিনি বান্দাকে সাহায্য করবেন।
২. অধিক হারে আল্লাহর জিকির করা
যেমন কুরআন পাঠ, তাসবীহ, তাহলীল পাঠ, ইস্তিগফার ইত্যাদি করা। কেননা মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, একমাত্র তাঁর জিকিরই অন্তরে প্রশান্তি আনতে পারে। তিনি বলেন, “জেনে রাখ আল্লাহ্র জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।” [সূরা রা’দঃ ২৮]
৩. শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা
আউজুবিল্লাহিমিনাশ শায়ত্বনির রাজীম (اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرّجِيْم) বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, পাঠ করা। হজরত সুলাইমান ইবনে সুরাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,একদিন দু’জন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে পরষ্পরকে গালিগালাজ করছিল। তদের একজন রেগে উঠেছিল। তার ক্রোধ এত অধিক হয়েছিল যে,তার ঘাড়ের রগগুলো ফুলে উঠছিল এবং তার বর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তার এই অবস্থা দেখে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি এমন একটি বাক্য জানি, লোকটি তা বললে তার রাগ দুর হয়ে যাবে। এক ব্যক্তি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা তাকে জানালো। বলল, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। সে বলল, আমার মধ্যে কি অসুবিধা দেখেছ? আমি কি পাগল নাকি? তুমি যাও এখান থেকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৪. অবস্থান পরিবর্তন করা
যদি দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে তবে বসে পড়বে বা শুয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রেগে যায় তবে সে যদি দণ্ডায়মান থাকে তাহলে বসে পড়বে। তাতেও যদি রাগ না থামে তবে শুয়ে পড়বে।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
৫. সঠিকভাবে দেহের হক আদায় করা
প্রয়োজনীয় ঘুম ও বিশ্রাম গ্রহণ করা, সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ না করা, অযথা উত্তেজিত না হওয়া। ক্রুদ্ধ ব্যক্তিদের ক্রোধের কারণ খুঁজতে গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তির মধ্যেই এ কারণগুলো পাওয়া গেছে -অধিক পরিশ্রমের কাজ করা, ক্লান্তি, অনিদ্রা, ক্ষুধা ইত্যাদি।
আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি শুনেছি যে, তুমি দিনের বেলা রোজা রাখ এবং রাতের বেলা নফল নামাজ আদায় কর-এটা কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এরূপ করো না। বরং মাঝে মাঝে রোজা রাখবে এবং মাঝে মাঝে রোজা ছাড়বে এবং রাতের কিছু অংশে নামাজ পড়বে এবং কিছু অংশে বিশ্রাম নেবে। কারণ-
> তোমার উপরে তোমার শরীরের হক রয়েছে,
> তোমার চোখের হক রয়েছে,
> তোমার উপরে তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে,
তোমার জন্য প্রতিমাসে তিন দিন রোযা রাখাই যথেষ্ট। এতে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব রয়েছে। কেননা প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো একাধারে রোজা রাখতে এবং রাতের বেলা নামাজ পড়তে সক্ষম। আব্দুল্লাহ বিন আমর বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়ে বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ মেনে নিতাম, তাহলে কতইনা ভাল হতো। (মুসলিম)
৬. রাগের যাবতীয় কারণ থেকে দূরে থাকা।
৭. রাগের সময় চুপ থাকা
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা প্রদান কর, মানুষের উপর সহজ কর, কঠোরতা আরোপ করোনা, তোমাদের কেউ রাগন্বিত হয়ে গেলে সে যেন চুপ থাকে।’ (মুসনাদ, জামে)
রাগ নিয়ন্ত্রণকারীর মর্যাদা অনেক বেশি। তাই যে সকল আয়াত ও হাদিস রাগ সংবরণ করার উৎসাহ দেয় সেগুলো এবং যেগুলো ক্রোধের ভয়বহতা সম্পর্কে সর্কত করে সেগুলো মনে করা এবং ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় ক্রোধকে সংবরণ করে, অথচ সে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম ছিল, তাকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের ময়দানে সকল মানুষের সামনে আহবান করবেন। এরপর জান্নাতের আনত নয়না হুর থেকে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে স্বাধীনতা দেবেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তাদের সাথে তার বিবাহ দিয়ে দেবেন।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)