এবার শেখ হাসিনার বোন ও ভাগ্নির ভাগ্যে কী?
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৪ এএম
পারিবারিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্যে প্রতিমন্ত্রীর পদ খোয়ানো টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশের একটি মামলার রায় হতে যাচ্ছে সোমবার। এ ব্রিটিশ এমপির মা শেখ রেহানার ১০ কাঠার প্লট দুর্নীতি মামলায় খালা ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জন আসামি রয়েছেন।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন।
পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় বৃহস্পতিবারই আওয়ামী লীগ সভাপতির ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। তার আগে গত ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ রেহানার কন্যা ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ তার ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির প্লট দুর্নীতি ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর প্লট দুর্নীতি মামলারও আসামি। টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পূর্বাচলে মা, ভাই ও বোনের প্লট বরাদ্দে তিনি তার ‘বিশেষ ক্ষমতা’ ব্যবহার করে খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রাখেন।
রেহানার প্লট দুর্নীতি মামলার অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) অলিউল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি ২) মো. নুরুল ইসলাম, রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ এবং সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেই ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
দুদকের কৌঁসুলি তরিকুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়, সাক্ষ্যের মাধ্যমে আমরা সেই সব প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছি। এর মধ্যে ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
“আমরা সর্বোচ্চ সাজাই প্রত্যাশা করছি। দুদকের বিপক্ষেও শুনানি হয়েছে। দুই পক্ষের যৌক্তিক, অযৌক্তিক বিষয় বিবেচনা করে আদালত সাজার রায় দেবে।”
আসামিদের মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে রয়েছেন। আদালতকে সম্মান দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করায় তাকে হাসিনা পরিবারের তিন প্লট দুর্নীতির মামলায় লঘু শাস্তি হিসেবে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
খুরশীদের আইনজীবী শাহীনুর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার তিনটি মামলায় রায় হয়েছে। সেখানে খুরশীদ আলমের এক বছর করে সাজা হয়েছে। এই মামলার ন্যাচারও এক, শুধু বরাদ্দ গ্রহীতা পৃথক।
“তার পক্ষে মামলা লড়েছি। তার খালাস হওয়া উচিত। আশা করছি, তিনি খালাস পাবেন।”
‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে’ রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত জানুয়ারিতে হাসিনা ও রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক।
সবকটি মামলার আসামি শেখ হাসিনার ৭ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে তার পরিবারের তিন মামলায়। বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে একটি মামলায় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আরেক মামলায় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এর চারদিন বাদে রেহানার প্লট দুর্নীতির মামলার রায় হতে যাচ্ছে। তার ছেলে ববি ও মেয়ে রূপন্তীর পৃথক প্লট দুর্নীতির মামলা সাক্ষ্যের পর্যায়ে রয়েছে।
গত ৩১ জুলাই এসব মামলায় হাসিনা ও রেহেনা পরিবারের সাত সদস্যসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে (বেশিরভাগই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত) অভিযোগ গঠন করে আদালত।
গত ২৫ নভেম্বর রেহানার প্লট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের দিন সোমবার ঠিক করে দেয় আদালত।
মামলা থেকে যেভাবে রায়ের পর্যায়ে
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিনই ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে।
ওই সময় থেকেই একের পর এক মামলা হতে থাকে থানা ও আদালতে। ২৬ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পাঁচ স্বজনের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
শেখ রেহানার প্লট নম্বর ১৩, ববির প্লট নম্বর ১১ ও রূপন্তীর প্লট নম্বর ১৯। আর শেখ হাসিনার প্লট নম্বর ৯, জয়ের ১৫ নম্বর এবং পুতুলের প্লট নম্বর ১৭।
তার আগে অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরও দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। এরপর ১৩ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ করা হলেও তারা আদালতে হাজির হননি। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে গত ৩১ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক রবিউল আলম। একই আদালত ববি ও রূপন্তীর মামলাতেও অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
গত ১৩ অগাস্ট মামলা তিনটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সেদিন সাক্ষ্য দেন রেহানার প্লট মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক সালাহ উদ্দিন, রূপন্তীর প্লট মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং ববির প্লট মামলার বাদী সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
এরপর ২৮ অগাস্ট সাক্ষ্য দেন তিনজন—রাজউকের (এস্টেট ও ভূমি) উপপরিচালক মো. মাহবুবার রহমান, সহকারী পরিচালক অসীম শীল ও উল্লাস চৌধুরী।
তারপর ৪ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন আরও ৯ জন। তারা হলেন—গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেন ও শফিকুল ইসলাম, এনবিআরের কর অঞ্চল-৬ এর প্রধান সহকারী মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল হক এবং নোটিস সার্ভার আবু তাহের।
গত ২১ সেপ্টেম্বর আরও চারজন সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন—ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের নির্বাহী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান, অপারেটর শেখ শমশের আলী, অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ সদস্য হিমেল চন্দ্র দাস এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আক্তার জাহান।
এরপর ৬ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার গৌতম কুমার সিকদার, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম ও সিনিয়র অফিসার রিয়াদ মাহমুদ সাক্ষ্য দেন।
১৬ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন ৯ জন। সাক্ষীরা হলেন—ঢাকা দক্ষিণ সিটির পৌরকর শাখা অঞ্চল-১ এর উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তৈয়বা রহিম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক রেশমা ও রেভিনিউ সুপারভাইজার দেওয়ান মো. সাঈদ।
এরপর ৩০ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকলেও তা হয়নি। তার আগের দিন রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে ২ নভেম্বর তাকে রেহানা পরিবারের তিন মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সেদিন সাক্ষ্য দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একান্ত সচিব মোহাম্মদ ওসমান গনি, মোটর ক্লিনার উজ্জল হোসেন, গাজীপুরের কালীগঞ্জের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান, গুলশানের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার রাকিবুল ইসলাম, কর বিভাগের সহকারী আইনজীবী হানিফ দিহিদার ও রাজউকের অফিস সহকারী আব্দুর রহীম।
এরপর ৯ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন—ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন, ঢাকার মহানগর হাকিম সেফাতুল্লাহ ও আরেক মহানগর হাকিম হাসিবুজ্জামান, সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মনির হোসেন, রাজউকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও শাখা প্রধান লায়লা নূর বিশ্বাস, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক আল মামুন মিয়া, রাজউকের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম অপারেটর জাকির হোসাইন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জহিরুল ইসলাম খান, রাজউকের উপসচিব তানজিলুর রহমান, দুদকের কনস্টেবল আজহারুল ইসলাম, ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান ও গাজীপুরের সাব-রেজিস্ট্রার সোহেল রানা।
এতদিন এ তিন মামলা একসঙ্গে চললেও ৯ নভেম্বরের পর সেগুলোর আলাদা দিন ঠিক করা হয়। রূপন্তীর মামলায় সাক্ষ্যের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ঠিক করা হয়েছে। আর ববির মামলায় সাক্ষ্যের জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করা রয়েছে।
রেহানার প্লট দুর্নীতির মামলায় গত ১৮ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়াকে জেরার মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্য শেষ হয়। ২৩ নভেম্বর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির দিন ঠিক করা হয়।
কারাগারে থাকা মামলার একমাত্র আসামি খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। এরপর ২৫ নভেম্বর এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায়ের দিন ঠিক করা হয়।
আসামিদের কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ
আসামিদের কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তার বর্ণনা অভিযোগপত্রে দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।
রেহানা সিদ্দিক: রাজউক এলাকায় আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। এক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালা মানা হয়নি; রাজউকে কোনো আবেদন না করেই প্লটটি পেতে বোন হাসিনার কাছে আবদার করে বসেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা।
টিউলিপ সিদ্দিক: মা রেহানাকে প্লট পাইয়ে দিতে আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং খালা শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তার করেন।
শেখ হাসিনা: ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোনকে প্লট বরাদ্দে সহায়তা করেন। এর মাধ্যমে তিনি পরিবারকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন। তিনি ও তার দপ্তরে একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন যোগসাজশ করে নিজে ও অপরকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধানের দপ্তরের একটি নথি বিনষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন: প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংরক্ষিত কোটায় রেহানার নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে গৃহায়ন সচিবকে চিঠি দেন। তিনি ও শেখ হাসিনা যোগসাজশ করে নিজে ও অপরকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধানের দপ্তরের একটি নথি বিনষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন।
সাইফুল ইসলাম: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা আইন ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিতে সই করেন।
পূরবী গোলদার: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি আইন ও বিধি-বিধানকে পাশ কাটিয়ে প্লট বরাদ্দের প্রস্তাব ও হস্তান্তরে সহায়তা করেন।
অলিউল্লাহ: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আইন ও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিতে সই করেন।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অবৈধভাবে রেহানান নামে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন ও হস্তান্তরে সহায়তা করেন। এর মাধ্যমে তিনি ‘বেআইনি অনুগ্রহ’ দেখান।
শরীফ আহমেদ: এই সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে জয়ের নামে প্লট বরাদ্দ ও হস্তান্তর করেন।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী যোগসাজশ করে সংস্থার এক সভায় রেহানার নামে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন করেন।
রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ এবং সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলাম অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দের নথিতে সই করেন।
হাসিনার সঙ্গে টিউলিপেরও ‘পতন’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড দামের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার খবর নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ সিদ্দিক।
তার আগে আওয়ামী লীগের পতনের পরপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগেও টিউলিপের নাম আসে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর টিউলিপ ও তার বোনের পাওয়া ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের মামলায় টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় গত এপ্রিলে তার আইনজীবী অভিযোগ করেন, দুদক ‘প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর কথা বললেও কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন করেনি। সেই সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টায়ও ‘সাড়া দেয়নি’। তাতে টিউলিপের ‘ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এ লেবার এমপির আইনজীবীরা।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত ২৩ এপ্রিল বলেছিলেন, টিউলিপ নির্দোষ হলে কেন পদত্যাগ করলেন?
“কেন তিনি তার আইনজীবীদের দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন? দুদক তার আইনজীবীকে ইমেইলের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশে এই মামলার আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন।”
গত বছরের মাঝামাঝিতে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে সরকার গঠন করেছে লেবার পার্টি, যাতে আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান টিউলিপ সিদ্দিক।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ প্রথমবার এমপি হন ২০১৫ সালে। পরে ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও পুনঃনির্বাচিত হন।
লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করা টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।