আমাদের অনেকেরই ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে এবং প্রতিনিয়ত কারো না কারো ভোটার আইডি কার্ড হারাচ্ছে। ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এই ভেবে যে, হারানো আইডি কার্ড বের করার নিয়ম কি! যদিও হারিয়ে যাওয়া আইডি কার্ড পাওয়ার উপায় খুব সহজ। তবুও অনেকেই আছে ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে বের করার নিয়ম কি তা ভালো বোঝে না। অনেকেই পরামর্শ দেয় ওমুক দোকানে যা হারানো ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করে দেবে। দেকানদার তার কাছ থেকে ভালো পরিমাণ টাকা নিয়ে কাজটি করে দেয়।
কিন্ত এই একই কাজ আপনি খুব সহজেই নিজে নিজে করতে পারেন আপনার হাতের মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবাহর করে। ভোটার আইডি কার্ড হারিয়েছে ভালো কথা, হারাতেই পারে। ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে কি করতে হবে বা ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে করণীয় কি সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করবো। খুব সহজেই একজন ব্যক্তি তার হারানো ভোটার আইডি কার্ড তুলতে পারবে যদি সে এই পরামর্শ অনুসরণ করে।
ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথম কাজ:
ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথম কাজ হবে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করা। জিডিতে অবশ্যই এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। যদি আপনার কাছে এনআইডি কার্ডের নম্বর বা কপি না থাকে তাহলে যার ভোটার আইডি কার্ড হারিয়েছে তার ভোটার নম্বর উল্লেখ করা যাবে। ১২ সংখ্যার এই ভোটার নম্বর ভোটার তালিকা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বর/কাউন্সিলরের কাছে অথবা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার তালিকা আছে।
হারিয়ে যাওয়া ভোটার আইডি কার্ড তোলার আবেদন পদ্ধতি:
ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে, থানায় জিডি করা হয়েছে এখন আবেদন করার দুইটি উপায় আছে। প্রথমত সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস গিয়ে হারানো আইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন ফরম- ৬ সংগ্রহ করতে হবে। ফরমটি ভালো করে পড়ে নিয়ে পূরণ করতে হবে। তারপর হারানো ভোটার আইডি কার্ড তোলার নির্ধারিত ফি বিকাশ অথবা রকেট অ্যাপের মাধ্যমে এনআইডি রিইস্যু ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি জমাদানের রশিদ এবং জিডির কপি আবেদন ফরম-৬ এর পিছনে পিন-আপ করে অফিসে জমা দিলে আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়। এক্ষেত্রে আবেদনের নিচের অংশ ছিড়ে আবেদনকারীকে দেয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, অনলাইন সিস্টেমে হারানো ভোটার আইডি কার্ড তোলার আবেদন করা যায়। ঘরে বসে নিজেই নিজের হারিয়ে যাওয়া ভোটার আইডি কার্ড তোলার আবেদন করাই সব থেকে সুবিধাজনক। সে জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইট https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ঠিকানায় গিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে লগইন করতে হবে। লগইন করার পর রিইস্যু অপশনে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ভোটার আইডি কার্ড তোলার আবেদন দাখিল করা যাবে। তবে আবেদন দাখিল করার আগে অবশ্যই হারানো ভোটার আইডি কার্ড তোলার নির্ধারিত ফি হিসাব করে নিয়ে রকেট/বিকাশ এ্যাপের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
আবেদন সাবমিট করা হয়ে গেলে আবেদনের একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করা যাবে এবং সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে কাছে রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে কখনো অফিসে গিয়ে খোজ নিতে চাইলে আবেদনের ওই কপিটি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে পুনরায় তোলার জন্য অনলাইনে আবেদন দাখিল করার সময় পুনমুদ্রণের কারণ হিসেবে 'হারিয়ে গেছে' না সিলেক্ট করে 'ঠিকানা পরিবর্তন' সিলেক্ট করেও ভোটার আইডি কার্ড তোলার আবেদন সাবমিট করা যায়। যারা ভোটার এলাকা স্থানান্তর করেছেন তাদের জন্য এই নিয়ম।
এক্ষেত্রে আবেদনের সাথে জিডির কোন তথ্য দেয়া লাগবে না এবং জিডির কপিও দেয়া লাগবে না। শুধু ফি জমা দিলেই ভোটার আইডি কার্ড তোলা আবেদন সাবমিট করা যায়। আপনার ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে অনলাইনে আবেদন করার সময় ’ঠিকানা পরিবর্তন’ সিলেক্ট করে আবেদন দাখিল করে দেখতে পারনে। ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের কোন আবেদনই বাতিল হয় না।
হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে আবেদনকারীর মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। ৩-৫ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করা যায়।
হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে যদি অনলাইনে লগইন করা যায় তাহলে ডাউনলোড অপশন থেকে মূল ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করা যায়। রঙ্গির পিডিএফ ফরমেটে ডাউনলোড হয় কপিটি। ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপিটি সংরক্ষণ করে রাখলে পরবর্তীতে যতবার খুশি ততবার প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। কখনো ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে পুনরায় আবেদন করা লাগবে না।
হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন অনুমোদন পাওয়ার পর অফিস থেকে একবার কার্ড প্রিন্ট করে ফেললে তখন আর অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ডের কপি ডাউনলোড হয় না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে হয়।