৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যুব মহাসমাবেশের আয়োজন করে যুবলীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে ১০ লাখ বা তার থেকে বেশি লোকসমাগম করার প্রস্তুতিও গ্রহণ করে সংগঠনটি। কিন্তু পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকালে মহাসমাবেশের সময় নির্ধারিত থাকলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকার বাইরে থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন সমাবেশস্থলে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগেই আড়াই থেকে তিন লাখ লোক সোহরাওয়ার্দীতে এসে হাজির হন। পরে সেখানেই জুমার নামাজ আদায় করেন নেতাকর্মীরা।
দুপুর আড়াইটার পরে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগে নেতাকর্মীরা মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত করেন সোহরাওয়ার্দী ময়দানসহ আশপাশের এলাকা। সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুরো সমাবেশের নিরাপত্তায় পোশাকধারী ফোর্সের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্য ছিলেন প্রায় ৩০ হাজারের বেশি।
সমাবেশের আগে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেছিলেন, ‘মূল সংগঠন আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করছি তারাও সমাবেশে অংশ নেবেন। আমরা টার্গেট করেছিলাম ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত হবে। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে, উপস্থিতি টার্গেটকে ছাড়িয়ে যাবে।’
সমাবেশে প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট খোলা রেখে অন্য সব পথ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রবেশের সব গেট ছিল সেনাবাহিনী ও এসবি সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে। বসানো হয় স্ক্যানার মেশিন। এছাড়া প্রত্যেক নেতাকর্মীকে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি গেট দিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করেছেন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখের মতো নেতাকর্মী। আর শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মাজার গেটসহ মৎস্য ভবন পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন অনেকে। তাও দুই থেকে আড়াই লাখের কম নয়।
মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত রাস্তায় সকালের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে দিলেও জুমার নামাজের পর এই রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নামাজের পরেই একে একে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সমাবেশস্থল ঘুরে দেখা গেছে, মূল মঞ্চের প্যান্ডেলের ভেতরে সবাই সারিবদ্ধভাবে বসে থাকলেও বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন নেতাকর্মীরা। মূল মঞ্চের ডানে সবুজ রঙের টি-শার্ট পরে অবস্থা নেন মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতাকর্মীরা। আর বাঁয়ে অবস্থান নেন মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। মঞ্চের সামনেই বসে ছিলেন দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে ৬০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নিয়েছি। সব নেতাকর্মীর গায়ে লাল টি-শার্ট ও হাতে দলীয় পতাকা। আমরা নেতাকর্মীদের জন্য ৬০ হাজার টি-শার্ট বানিয়েছি, যার সব বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই সমাবেশস্থলে অবস্থান করছি। সমাবেশ শেষ করে আমরা বাসায় ফিরবো।’
সমাবেশে কত মানুষ হয়েছে জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘কত লোক হয়েছে, এভাবে তো বলা যায় না। তবে যুবলীগের এবারের সমাবেশ সফল ও সার্থক হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের দফতর সম্পাদক এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তরের ৬৭টা ওয়ার্ড থেকে এক লাখের বেশি নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।’
যুবলীগের এই নেতা বলেন, ‘সমাবেশে আমার সঙ্গে ৫ শত নেতাকর্মী এসেছেন। এছাড়া উত্তরের এমন ওয়ার্ডও আছে, যেখান থেকে আটটি মিছিলও গেছে সমাবেশে। তাছাড়া, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেই ৫শ’ থেকে ৬শ’ করে নেতাকর্মী সমাবেশে গেছেন। কিন্তু প্রবেশ গেটে অতিরিক্ত কড়াকড়ি থাকায় তারা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে পারেনি।’
জানা গেছে, যুবলীগের শুক্রবারের সমাবেশে উত্তর যুবলীগের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। এরপর দক্ষিণ যুবলীগ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল থেকে আসা নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলেন চোখে পড়ার মতো। বরিশালের মেয়রের পক্ষ থেকে ৮টি লঞ্চ ভরে আসেন নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় পাঁচ থেকে সাত লাখ নেতাকর্মী ছিলেন। কিন্তু এ ছাড়া আব্দুল্লাহপুর ও ফার্মগেটসহ আশপাশের এলাকায় যেসব নেতাকর্মী ছিলেন, তা দিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া ঢাকা শহরের অনেক নেতাকর্মী ঢুকতে পারেননি।’
ঢাকা মহানগর রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘সমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে ৬ হাজার গাড়ি আসবে বলে জানানো হয়েছিল। আমরা সেভাবেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করি। আমাদের পার্কিংয়ের জায়গায় কোনও সমস্যা হয়নি। ঢাকায় আসা গাড়িগুলো নির্দিষ্ট স্থানেই পার্কিং করা হয়েছে। গত ১০ দিন ধরে আমরা এটা নিয়ে কাজ করেছি। এছাড়া সমাবেশকে ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থা খুবই ভালো ছিল।’
কত হাজার গাড়ি এসেছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রতিটি গাড়ির ফুট মেপে ৬ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করি। কিন্তু কোনও গাড়ি রাখতে সমস্যা হয়নি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ৬ হাজারের মতো গাড়ি এসেছে।’
ঢাকা মহানগর রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকায় যা মানুষ ছিল, তাতে পাঁচ থেকে সাড়ে লাখ তো হবেই।’