সরকারি চাকরির বদলে চা বিক্রির পরামর্শ মমতার

জাগো বাংলা ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:৫৪ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
সরকারি চাকরির বদলে চা বিক্রির পরামর্শ মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যখন একের পর এক দুর্নীতি সামনে আসছে তখন বেকারত্বের প্রশ্নে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। এমন সময় সরকারি চাকরির বদলে চা বিক্রির পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘বিব্রত না হয়ে চা, ঝালমুড়ি, ঘুগনি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, বিক্রি তো হবেই, চাহিদাও খুব বাড়বে।’

বৃহস্পতিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে বেসরকারি চাকরির নিয়োগপত্র বণ্টন অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করতে এমন অভিনব প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যটিতে বন্ধ হয়ে যায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়মিত নিয়োগ প্রক্রিয়া। অভিযোগ ওঠে ব্যাপক নিয়োগ দুর্নীতির। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনে সিবিআই ও ইডি। এমন অবস্থায় সরকারি চাকরির বদলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ‘উৎকর্ষ বাংলা নামে’ বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে রাজ্যজুড়ে।

এদিন খড়গপুরে বেসরকারি চাকরির নিয়োগপত্র বণ্টনের এমনই এক অনুষ্ঠানে এসে মমতা বলেন, ‘চা ভরতি কেটলি নিন, সঙ্গে কয়েকটা কাপ নেবেন। এসব নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন হু হু করে চা বিক্রি হয়ে যাবে। পরেরদিন মাকে বলুন, একটু ঘুগনি বানিয়ে দিতে। সেটাও নিয়ে যান। সব বিক্রি হয়ে যাবে। একটা কৌটোয় ঝালমুড়ি ভরে নিন, অল্প বাদাম-ছোলা ফেলে দিন। দেখবেন একের পর একজন খেতে চাইবে। বিক্রি করে শেষ করতে পারবেন না।’

একই সঙ্গে এদিন ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প দপ্তরের উদ্যোগে শহরে জলাশয়ের কচুরিপানা দিয়ে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করার কথা বলেন মমতা। গ্রামে কাশফুল দিয়ে লেপ, কম্বল, বালিশ তৈরির পরামর্শও দেন তিনি। কলকাতা পুরসভার পক্ষে মাঝারি, হালকা ও ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে মমতা যখন মেদিনীপুরে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের চা বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছেন ঠিক সেই সময় শিক্ষা ও নিয়োগসহ আট দফা দাবিতে বামপন্থী ছাত্র যুবদের আন্দোলনে উত্তাল কলকাতা। বাম ছাত্র-যুবদের কলকাতা পুরসভা অভিযান ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ধর্মতলা চত্বর। পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি হয় বাম ছাত্র যুবদের। বাম ছাত্র যুবরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই বাধা দেয় পুলিশ। তারপরই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ। দিন দুয়েক আগে বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে কার্যত যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল কলকাতার রাস্তা। আর এবার এসএফআই-এর মিছিলে ধুন্ধুমার। বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এদিন কলকাতার রাজপথে নামেন ডিওয়াইএফআই-এসএফআই কর্মীরা। তাদের দাবি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এরপরেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা চত্বর।

মমতার চা বিক্রির এমন পরামর্শে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা বলেন, মমতার আমলে রাজ্যের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবার পরিবর্তে সংকুচিত হয়েছে। তাই ব্যর্থতা ঢাকতে এমন প্রলাপ বকছেন মমতা। এর আগে ঘরে ঘরে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসে বিপ্লব দেবের নেতৃত্বাধীন বিজেপির সরকার। এক বছর কাটতে না কাটতেই সরকারি চাকরি দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের হাঁস-মুরগির ব্যবসা করার পরামর্শ দেন বিপ্লব দেব।