তৎকালীন আরবে সপ্তম দিনে নবজাতকের খতনা ও নামকরণ করা হতো। সেই নিয়ম অনুযায়ী সপ্তম দিনে মহানবী (সা.)-এর খতনা করা হয়। পিতৃহীন নবজাতককে কোলে নিয়ে স্নেহশীল দাদা আবদুল মুত্তালিব কাবাগৃহে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং প্রাণভরে দোয়া করেন।
খতনা ও আকিকা করার বিষয়টি আরবদের মধ্যে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। এ কথা তা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। (দেখুন—বুখারি, হাদিস : ৭, আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৪৩)
তবে রাসুল (সা.)-এর খাতনা যে সপ্তম দিনেই হয়েছিল—এ কথা অকাট্যভাবে বলা যায় না।
ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর খতনা সম্পর্কে তিনটি কথা চালু আছে—
১. তিনি খতনা ও নাড়ি কাটা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। ইবনুল জাওজি এটাকে মওজু বা জাল বলেছেন।
২. হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর গৃহে থাকার সময় প্রথম বক্ষবিদারণকালে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁর খতনা করেন।
৩. দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁকে সপ্তম দিনে খতনা করান ও নাম রাখেন এবং লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান। এগুলো সম্পর্কে যেসব বর্ণনা এসেছে, তার কোনোটিই শতভাগ বিশুদ্ধ নয়। এ বিষয়ে বিপরীতমুখী দুজন গবেষকের একজন কামালুদ্দিন বিন আদিম (রহ.) বলেন, আরবদের রীতি অনুযায়ী তাঁকে খতনা করা হয়েছিল। এটি এমন একটি রীতি, যা প্রমাণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বর্ণনার প্রয়োজন নেই। ’ (জাদুল মাআদ ১/৮০-৮১)
আকিকার দিন কুরাইশ বংশের সব লোককে দাওয়াত করে খাওয়ান। সবাই জিজ্ঞেস করলে আবদুল মুত্তালিব বাচ্চার নাম বলেন, ‘মুহাম্মদ’। এই অপ্রচলিত নাম শুনে লোকেরা বিস্ময়ভরে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি চাই যে আমার বাচ্চা সারা দুনিয়ায় ‘প্রশংসিত’ হোক। (রহমাতুল্লিল আলামিন : ১/৪১)
ওদিকে স্বপ্নের মাধ্যমে ফেরেশতার দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী মা আমেনা তাঁর নাম রাখেন ‘আহমাদ’ (রহমাতুল্লিল আলামিন : ১/৩৯)
উভয় নামের অর্থ প্রায় একই। অর্থাৎ ‘প্রশংসিত’ এবং ‘সর্বাধিক প্রশংসিত’।
উভয় নামই কোরআনে এসেছে। যেমন—‘মুহাম্মদ’ নাম এসেছে চার জায়গায়। যথাক্রমে সুরা আলে ইমরান ৩/১৪৪, সুরা আহজাব ৩৩/৪০; সুরা মুহাম্মদ ৪৭/২ এবং সুরা ফাতহ ৪৮/২৯।
তা ছাড়া ‘মুহাম্মদ’ নামেই একটি সুরা নাজিল হয়েছে সুরা মুহাম্মদ (৪৭ নম্বর সুরা)। অনুরূপভাবে ‘আহমাদ’ নাম এসেছে এক জায়গায় সুরা ছফ ৬১/৬।