সৃষ্টি জগতের মালিক মহান আল্লাহতায়ালা। তিনিই সব সৃষ্টির রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তবে আশরাফুল মাখলুকাতের (মানুষ) রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাসের নির্ভরতা তাদের ইবাদত বা আমলের ওপর। কুরআন-হাদিসের আলোকে যেসব কারণে রিজিকের সংকট সৃষ্টি হয় নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
ভোরে ঘুম থেকে না ওঠা
হজরত সাখর আল গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন -হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ভোরের বরকত দান করুন। তিনি (সা.) কোনো ছোট বা বড় বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন। ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৬০৬)।
ভোরে ঘুমানোয় অকল্যাণ আসে শয়তানের কাজে সহযোগিতার মাধ্যমে। যার প্রমাণ নিম্নের হাদিসে রয়েছে। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ ফরমান -রাতের বেলা শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথায় একটি দড়ি দিয়ে তিনটি গিরা দেয়। সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে একটি গিরা খুলে যায়। সে উঠে ওজু করলে আরেকটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর সে যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সব গিরা খুলে যায়। ফলে সে প্রশস্ত মনে হৃষ্টচিত্তে ভোরে উপনীত হয় এবং কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। আর সে যদি এরূপ না করে, তবে তার ভোর হয় অলসতা এবং অপবিত্র মন নিয়ে। ফলে সে কল্যাণ লাভ করতে পারে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩২৯)।
দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া
শক্তি বা দাপটে যদি রিজিক পাওয়া যেত, তাহলে বনের বাঘের রিজিকের অভাব হতো না। অপরদিকে পিঁপড়া না খেয়ে মারা যেত। তাই স্বীয় চেষ্টায় সর্বোচ্চ সীমায় থেকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা অবশ্য প্রয়োজন। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন -আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে (ইবাদত অপেক্ষা দুনিয়ার পেছনে দৌড়ালে) আমি তোমার দুহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন দূর করা হবে না।’ (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস ২৪৬৬)।
আত্মীয়তা ছিন্নকারী
আত্মী য়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব না পালনও রিজিক সংকীর্ণের অন্যতম কারণ। তাদের খোঁজখবর যেমন অবশ্য কর্তব্য, তেমনি তাদের হক পুরোপুরি আদায় করাও আবশ্যক। তা না করলে মৃত্যুর আগে হলেও নিকৃষ্টতর শাস্তি পেতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন -‘এবং যারা আত্মী য়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দেন। এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করে দেন।’ (সূরা মুহাম্মাদ : আয়াত ২২-২৩)।
হাদিসেও ইঙ্গিত রয়েছে। ‘হজরত আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন -মহান আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মী য়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর মতো; অন্য কাউকে দুনিয়াতে অতিদ্রুত আজাব দেওয়ার পরও আখিরাতের আজাবও তার জন্য জমা করে রাখেননি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৯০২)।
অপচয় করা
আমাদের রিজিকের সংকীর্ণতার সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আত্মী য়স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। কিছুতেই অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। তুমি যদি তাদের (অভাবী আত্মী য়, মিসকিন ও মুসাফির) পাশ কাটাতে চাও এ জন্য যে, তুমি এখনো নিজের জন্য তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সন্ধানে নিযুক্ত যা তুমি প্রত্যাশা করো, এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলো। তোমার হাতকে তোমার গলার সঙ্গে বেঁধে (সহযোগিতা থেকে একেবারে বিরত) দিও না, আর তা একেবারে প্রসারিত (নিজের প্রয়োজন থাকার পরও) করেও দিও না। তা করলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন এবং সব কিছুই দেখেন।’ (সূরা ইসরা : আয়াত ২৬-৩০)।
সুদের আদানপ্রদান করা
মহান প্রভু ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ সুদকে ক্ষয় (সমূলে/নিকৃষ্ট ধ্বংস) করেন এবং দানকে বর্ধিত (রিজিকে বরকত) করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রয়েছে, এটি হলো সুদের অভ্যন্তরীণ ও আধ্যাÍিক ক্ষতিগুলো এবং সদকার বরকতগুলোর বিবরণ। সুদ বাহ্যিকভাবে দেখতে বৃদ্ধিশীল লাগলেও অভ্যন্তরীণভাবে অথবা পরিণামের দিক দিয়ে সুদের অর্থ ধ্বংস ও বিনাশেরই হয়। মানবতার মুক্তির কাণ্ডারি বিশ্বনবি (সা.)ও হাদিসে এরূপ বর্ণনা করে গিয়েছেন। ‘যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয়, তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে (নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব) নিপতিত হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)।