হজরত নূহ আলাইহিস সালামকে আদমে সানি বা দ্বিতীয় মানব বলা হয়। তিনি যখন তার উম্মতকে এক আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন, তারা তার কথাকে হেসে খেলে উড়িয়ে দিয়েছিল বারবার। ইতিহাস বলে, নূহ আলাইহিস সালাম নিজের সম্প্রদায়কে তাওহীদের পথে যখন আহ্বান করতেন, তারা নবীকে অসম্মান ও অপমান করতে নিজেদের কানে হাত দিয়ে রাখতো। এভাবে সাড়ে ৯০০ বছর তারা আল্লাহর এই নবীকে বিরক্ত করেছিল এবং সত্য ধর্ম থেকে বিমুখ ছিল।
এক সময় নিজ সম্প্রদায়ের এমন উন্নাসিকতা দেখে চরম বিরক্ত হলেন আল্লাহর নবী নূহ আলাইহিস সালাম। আল্লাহর কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন এবং তাদের নির্মূলের দোয়া করলেন। পবিত্র কোরআনে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নূহ আমাকে বলল, হে আমার মালিক, আমি আমার জাতিকে দিবস রজনীতে, কালে-বিকালে সাড়ে নয়শ’ বছর দাওয়াত দিয়েছি। তারা আমার শোনেনি, বরং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত থেকেছে। যতই দীনের দাওয়াত দিয়েছি, তাদের অবাধ্যতার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এবার আমি বলছি, আপনি তাদের নির্মূল করে দিন। আযাব পাঠিয়ে ধ্বংস করে দিন। নতুবা এরা এতই খারাপ হয়ে গেছে যে, নিজেরা তো হেদায়াত পাবেই না, বরং এদের থেকে জন্ম নেয়া পরবর্তী প্রজন্মও কাফের মুশরিকই হবে। (আল কোরআনের সূরা নূহ এর ২৬-২৭ নং আয়াতের ভাবার্থ)।
এরপর কওমে নূহকে আল্লাহ জলোচ্ছ্বাস, বন্যা দিয়ে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেন। কেবল একটি নৌযানে অল্প কিছু ঈমানদার হজরত নূহ (আ.) এর সাথে দুনিয়ায় থেকে যায়।
এসময় তিনি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারী ও সত্য ধর্ম অবলম্বনকারী মুমিন ও মা-বাবার জন্য একটি দোয়া করেন। দোয়াটি হল-
رَبِّ اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنۡ دَخَلَ بَیۡتِیَ مُؤۡمِنًا وَّ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ؕ وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا تَبَارًا
‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নূহ, আয়াত, ২৮, আল বায়ান)
অর্থাৎ নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন যে, হে আমার রব! হে আল্লাহ, আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে এবং যে ব্যক্তি ঈমানের অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করে এবং কেয়ামতের দিন উপস্থিত সকল মুসলিম পুরুষ ও সকল মুসলিম নারীকে ক্ষমা করুন এবং কাফেরদের ধ্বংস বাড়িয়ে দিন। আল্লাহ তায়ালা হজরত নূহ (আ.)-এর দোয়া কবুল করে তাঁর উম্মতের সকল কাফেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কাফেরদের ব্যাপারে হজরত নূহ (আ.)-এর দুআ আল্লাহ কবুল করেছেন, তাই মুসলমানদের সম্পর্কে তিনি যে দুআ বলেছেন আল্লাহ তা কবুল করেননি এমনটা সম্ভব নয়। -(খাযানে নুহ, ৪/৩১৪-৩১৫, আদদাকির, ১২৮৬, শুয়াবুল ঈমান, ৯৫৯৬)