ইউরোপ-আমেরিকাসহ বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন দিবস বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মধ্যযুগে এর সূচনা হলেও নব্বই দশকের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী এর প্রসার ঘটে।
বাংলাদেশের মানুষ এ দিবসের সঙ্গে অনেকটা অপরিচিত থাকলেও বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও এক শ্রেণির প্রচার মাধ্যমের কারণে বর্তমানে এ দেশের তরুণ-তরুণীরা তা অবলীলায় ও মহাসমারোহে পালনের চেষ্টা করছে।
বর্তমানে মুসলমানরা তাদের চালচলন, রীতিনীতি এবং উৎসব-উদযাপনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ করে চলছে। মুসলিম সমাজে প্রচলিত এমন অনেক বিজাতীয় অপসংস্কৃতির অন্যতম সংযোজন 'ভ্যালেন্টাইনস ডে' বা 'বিশ্ব ভালোবাসা দিবস'। যা আমাদের দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে।
মূলত ভালোবাসার নামে তরুণ-তরুণীদেরকে অশ্লীলতার দিকেই ধাবিত করছে এ দিবসের যাবতীয় কার্যক্রম। এ দিবসকে কেন্দ্র করে পার্ক, রেস্তোরাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর, টিএসসি, চারুকলার বকুলতলাসহ সর্বত্র থাকে তরুণ-তরুণীদের তুমুল ভিড়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন নামী-দামী হোটেলেও বসে তরুণ-তরুণীর মিলন মেলা। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিল করা হয় হোটেলের অভ্যন্তর। অনুষ্ঠান সূচিতে থাকে লাইভ কনসার্ট, ডিজে শো, ডেলিশাস ডিনার এবং তরুণ-তরুণীদের উদ্যাম ড্যান্স। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে চলতে থাকে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশ গল্প।
কিন্তু আমাদের তরুণ-তরুণীরা কি জানে- তারা যাদের অনুসরণে এসব দিবস পালন করছে, তাদের ভালোবাসা হচ্ছে নৈতিকতার বন্ধন মুক্ত নিষিদ্ধ ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসার পরিণতি 'ধরো ছাড়ো' আর 'ছাড়ো ধরো' -গ্রহণ করো নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা ছাড়ার বেলেল্লাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী।
মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণ প্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করা সকল মুসলিমের ইমানি দায়িত্ব। মুসলমানদের জন্য এসব দিবস পালন করা জঘন্য অপরাধ।
ইসলাম বৈধ সম্পর্কও বৈধ সম্পর্কের ভেতরে থেকেই ভালোবাসার অনুমতি দেয়। কোরআন হাদিসে এমন কিছু ভালোবাসার কথা বর্ণিত হয়েছে যেসব মানুষকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে এবং পার্থিব জীবনেও দেয় শান্তি-স্বস্তি।
এমন কিছু ভালোবাসার বিবরণ তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ ও রাসুলের জন্য ভালোবাসা
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকে সে ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা পেয়ে যায়; (১) যার কাছে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল অন্য সব কিছু অপেক্ষা বেশি প্রিয়; (২) যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা রাখে এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করে; (৩) আর যদি ভয়াবহ আগুন প্রজ্বলিত করা হয়, তবে তাতে প্রবেশ করা তার কাছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা অপেক্ষা বেশি পছন্দনীয় হয়।’ (নাসায়ি, হাদিস; ৪৯৮৭)
মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বোলো।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)
স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা
এটি গুনাহ ও ফিতনা থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম। প্রতিটি মানুষেরই পৃথিবীতে অন্তত একজন একান্ত ভালোবাসার মানুষের প্রয়োজন হয়, যে একান্ত তারই হবে, সুখে-দুঃখে তার সঙ্গ দেবে। যার চোখে তাকিয়ে হতাশা ও কষ্ট ভুলবে। তার উপস্থিতি তাকে প্রশান্তি দেবে। মানুষের এই চাহিদা মেটাতে মহান আল্লাহ এক পবিত্র সম্পর্কের সৃষ্টি করেছেন, তা হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
এ জন্যই হয়তো রাসুল (সা.) বলেছেন, দুজনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৪৭)
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক