কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে লিওনেল মেসির সঙ্গী হিসেবে কাকে কাকে দলে রাখবেন কোচ স্কালোনি? প্রশ্নটা এ কারণে, কিছুদিন আগে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া’র মত ফুটবলার বলেছিলেন, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ দলে তার নিজের জায়গাই নিশ্চিত নয়। এমনিতেই গত বছর কোপা আমেরিকা জয়, এই বছর ফাইনালিসিমায় ইতালিকে হারিয়ে শিরোপা জয় এবং দলের অবস্থান বিবেচনা করে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে বলা হচ্ছে আর্জেন্টিনাকেই। টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার কারণে মেসিদের বাজির দরও বেড়ে যাচ্ছে হুহু করে।
তাছাড়া লিওনেল মেসি রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। যে কারণে, বোদ্ধারা মনে করছেন, ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে শিরোপাটা হয়তো এবার হাতে তুলে নিতে পারবেন বিশ্বের সেরা এই ফুটবলার। সম্ভবত এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সুতরাং, আর্জেন্টিনা সমর্থকরা চাইবেন- মেসিকে ঘিরে এমন একটি দল লিওনেল স্কালোনি তৈরি করুক, যাতে করে বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে ওঠে।
স্কালোনির ২৬ সদস্যের স্কোয়াডে থাকছেন কারা কারা?
গোলরক্ষক
অ্যাস্টন ভিলায় খেলা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ অবশ্যই অটো চয়েজ। কোপা আমেরিকা যেভাবে জিতিয়েছেন, কিংবা এরপর যেভাবে আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট রক্ষা করে চলেছেন তিনি- তাতে মার্টিনেজের বিকল্প আপাতত নেই। তবে, স্কোয়াডে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ গোলরক্ষক হিসেবে কারা থাকবেন- সেটাই আলোচনার বিষয়।
রিভারপ্লেটে খেলা ফ্রাঙ্কো আরমানির সম্ভাবনা রয়েছে স্কোয়াডে থাকার। এছাড়া ভিয়ারিয়ালে খেলা জেরেনিমো রুলির সম্ভাবনাও রয়েছে। হন্ডুরাসের বিপক্ষে রুলিকেই পরীক্ষা করে দেখেছেন স্কালোনি। এছাড়া ইতালিয়ান লিগের দল আটলান্টায় খেলা হুয়ান মুসো, বোকা জুনিয়র্সে খেলা অগাস্টিন রোসি এবং সেল্টা ভিগোর গোলরক্ষক অগাস্টিন মার্চেসিনের ভেতর থেকে কাকে স্কোয়াডে রাখেন, সে সিদ্ধান্ত এখন কোচ স্কালোনির হাতে।
সব মিলিয়ে কোচ স্কালোনির হাতে গোলরক্ষকের যে তালিকা রয়েছে, সেটা হচ্ছে-
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), হুয়ান মুসো (আটলান্টা), জারোনিমো রুলি (ভিয়ারিয়েল), ফ্রাঙ্কো আরমানি (রিভার প্লেট), অগাস্টিন রোসি (বোকা জুনিয়র্স), অগাস্টিন মার্চেসিন (সেল্টা ভিগো)।
ডিফেন্ডার
ডিফেন্স বড় একটা সমস্যা সব সময়ই আর্জেন্টিনার জন্য। তবে, লিওনেল স্কালোনি দুর্দান্ত একটি ডিফেন্স সেট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যে কারণে দুশ্চিন্তাও কমেছে অনেকখানি। স্কালোনির হাতে রয়েছেন নিকোলাস ওতামেন্দি এবং ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর মত পরীক্ষিত সেন্টার ব্যাক। লেফট এবং রাইট ব্যাকে একাদশে জায়গা করে নিতে প্রস্তুত লিসান্দ্রো মার্টিনেজ এবং নিকোলাস তালিয়াফিকো। ম্যানইউর হয়ে মার্টিনেজ দুর্দান্ত খেলছেন। ফরাসি ক্লাব লিওঁ’র হয়ে এবং আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়েও নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছেন তিনি।
লিওনেল স্কালোনি সাধারণত ৪-৩-৩ ফরমেশনে দল সাজিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে চারজন ডিফেন্ডার তার একাদশেই প্রয়োজন। কিন্তু স্কালোনির হাতে বিকল্পের অভাব নেই। যেসব ডিফেন্ডার কোচের হাতে রয়েছেন, তারা হলেন-
নিকোলাস ওতামেন্দি (বেনফিকা), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম), লিসান্দ্রো মার্টিনেজ (ম্যানইউ), নিকোলাস তালিয়াফিকো (লিওঁ), নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়াল বেটিস), ফাকুন্দো মেদিনা (লেন্স), নেহুয়েন পেরেজ (উদিনেস), মার্কোস আকুনা (সেভিয়া), লুকাস মার্টিনেজ কুয়ার্তা (ফিওরেন্তিনা), হুয়ান ফয়েথ (ভিয়ারিয়েল), মার্কোস সেনেসি (বোর্নমাউথ), ভ্যালেন্তিন ভার্কো (বোকা জুনিয়র্স)।
মিডফিল্ডার
প্রতিপক্ষের জন্য আর্জেন্টিনার পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো তাদের মাঝমাঠ। লিওনেল স্কালোনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মিডফিল্ডকে শক্তিশালী করার দিকেই নজর দিয়েছেন বেশি। যে কারণে বলা যায় দুর্বোধ্য এবং অপ্রতিরোধ্য একটি মিডফিল্ড সেট গড়ে উঠেছে তার হাতে। যেখানে অভিজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় ঘটেছে তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারে।
রদ্রিগো ডি পল, জিওভান্নি লো সেলসো কিংবা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া- কাকে আপনি পেছনে রাখবেন। একাদশেই জায়গা পেয়ে যান এই তিনজন। কিন্তু তাদের জায়গাও নিশ্চিত নয়। কারণ, লিয়ান্দ্রো পেরেদেসের মত মিডফিল্ডার দলকে ভারসাম্য এনে দেন না, শক্তিও বৃদ্ধি করেন অনেক। এছাড়া ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছে এনজো ফার্নান্দেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিসার, থিয়াগো আলমাদার মত ফুটবলার। মিডফিল্ডার বাছাই করার জন্য স্কালোনির হাতে রয়েছে লম্বা এক তালিকা। এক নজরে দেখে নিই- কারা আছেন সেই তালিকায়।
গুইদো রদ্রিগেজ (রিয়াল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকুয়েল পালাসিওস (বায়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিসার (ব্রাইটন), জিওভান্নি লো সেলসো (ভিয়ারিয়েল), এনজো ফার্নান্দেজ (বেনফিকা), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), আলেজান্দ্রো গোমেজ বা পাপু গোমেজ (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্টাস), লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্টাস), ম্যানু লানজিনি (ওয়েস্টহ্যাম), রবার্তো পেরেইরা (উদিনেস), নিকোলাস ডোমিঙ্গেজ (বোলোনা), ইগনাসিও ফার্নান্দেজ (অ্যাটলেটিকো মিনেইরো), অ্যালান ভারেলা (বোকা জুনিয়র্স), ম্যাতিয়াস জারাচো (অ্যাটলেটিকো মিনেইরো), ফাউস্তো ভেরা (করিন্থিয়ান্স)।
ফরোয়ার্ড
লিওনেল মেসি যে দলের আক্রমণভাগে থাকেন, তাকে অপ্রতিরোধ্য বলাই যায়। প্রতিপক্ষের যে কোনো ধরনের ডিফেন্স ভেঙে গোল আদায় করে নেয়ার জুড়ি মেলা ভার তার। তারওপর গত প্রায় দুই বছর লওতারো মার্টিনেজকে নিয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তুলেছেন মেসি। রাইট উইং থেকে বল নিয়ে এসে গোল বানিয়ে দেন মেসি আর প্রতিপক্ষের জাল ছিন্নভিন্ন করে দেন মার্টিনেজ।
পিএসজি কিংবা জাতীয় দল- মেসি রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তার সঙ্গে পাওলো দিবালা, হুলিয়ান আলভারেজ এবং লওতারো মার্টিনেজরা তো রয়েছেনই। তবুও, দেখে নেয়া যাক কোচ লিওনেল স্কালোনির হাতে আর কী কী অপশন রয়েছেন- স্কোয়াড সাজানোর জন্য!
লিওনেল মেসি (পিএসজি), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্তিনা), অ্যানজেল কোরেয়া (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), লওতারো মার্টিনেসজ (ইন্টারমিলান), পাওলো দিবালা (রোমা), হুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানসিটি), জোয়াকিন কোরেয়া (ইন্টারমিলান), লুকাস আলারিও (এইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট), এমি বুয়েন্দিয়া (অ্যাস্টনভিলা), জিও সিমিওনে (নাপোলি), লুকাস ওকাম্পোস (আয়াক্স), আলেজান্দ্রো জার্নাচো (ম্যানইউ), ম্যাতিয়াস সউলে (জুভেন্টাস)।
বিশ্বকাপে কেমন একাদশ হতে পারে
লিওনেল মেসি অবশ্যই দলের নেতৃত্বে থাকবেন। কোচ লিওনেল স্কালোনি অবশ্যই বিশ্ব আসরে দলকে আক্রমণাত্মক হিসেবেই সাজানোর চেষ্টা করবেন। আক্রমণভাগে লওতারো মার্টিনেজ, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এবং জিওভান্নি লো সেলসোকে দিয়ে অ্যাটাকিং মিডফিল্ড সাজানোর সম্ভাবনা খুব বেশি।
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস এবং রদ্রিগো ডি পল থাকবেন একটু নিচে। তালিয়াফিকো এবং মোলিনাকে দায়িত্ব দিতে পারেন রাইট এবং লেফট ব্যাক পজিশন সামলানোর। আর সেন্টারব্যাক হিসেবে ওতামেন্দি এবং রোমেরোর ওপর আস্থা রাখতে পারেন কোচ। পোস্টের নিচে তো থাকবে এমিলিয়ানো মার্টিনেজই।
সুতরাং: বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য ফরমেশন হতে পারে ৪-২-৩-১। একাদশ হতে পারে এমন: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, নাহুয়েল মোলিনা, নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, নিকোলাস তালিয়াফিকো, লিয়ান্দ্রো পেরেদেস, রদ্রিগো ডি পল, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লিওনেল মেসি, জিওভান্নি লো সেলসো এবং লওতারো মার্টিনেজ। সূত্র: গোলডটকম