‘রিজার্ভ বেঞ্চ’ সব সময় একটি দলের মূল শক্তি হতে পারে না। প্রয়োজনে একটি, দুটি বা তিনটি পরিবর্তন করে দলকে খেলানোর ঝুঁকি নেওয়া যায়। কিন্তু একাদশের নয় জন খেলোয়াড় বদলে দেওয়ার চরম ঝুঁকিটা নিয়ে ফল কেমন হতে পারে তা কোচ তিতে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এমনিতে টানা দুই ম্যাচ জিতে ব্রাজিলের নকআউট নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। তাই ‘চোট,অসুস্থতা ও বিশ্রামের’ কারণে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ‘নতুন এক দল’ খেলেছে। অনেক আশা নিয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের মাঠে নামালেও ফল যে অনুকূলে আসেনি।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে ভালো খেলেও ব্রাজিল গোল পেলো না। আর শেষ মুহূর্তে সুযোগ পেয়ে লক্ষ্যভেদ করে আফ্রিকার অদম্য সিংহরা চমক দেখিয়ে দিয়েছে। স্তব্ধ করে দিয়েছে প্রায় গ্যালারিভর্তি দর্শক-সমর্থকদের গগনবিদারি চিৎকার আর উচ্ছ্বাস। নিজেরাই তখন উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে অন্য এক ব্রাজিলকে দেখার প্রত্যাশা ছিল সবার। বিশেষ করে হাজারো সমর্থকরা নানান রঙ-ঢঙে সেজে হলুদ জার্সিধারীদের দারুণ এক ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এসে ব্রাজিল যেন সবাইকে হতাশ করলো। নেইমার-রিচার্লিসন-ভিনিসিয়ুসদের ছাড়া যে গোল পাওয়া কঠিন বিষয়। তা-ই যেন প্রমাণিত হলো।
অথচ তিতে আস্থা রেখেছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের ওপর। নেইমার-ভিনিসিয়ুসদের ছাড়াই বেঞ্চে বসে থাকা খেলোয়াড়রা দলকে টেনে নিয়ে যাবেন সামনের দিকে– এমনটি বিশ্বাস ছিল তার। ম্যাচে সুযোগও এসেছে অনেক। কিন্তু অ্যান্তনি-রদ্রিগোরা নিজেদের নেইমারদের বিকল্প হিসেবে সেভাবে মেলে ধরতে পারলেন কোথায়?
প্রথম দুই ম্যাচে শুরুর একাদশে যারা খেলেছেন তারা আবার ২০০২ সালের ফাইনালের পর ব্রাজিলের সবচেয়ে তরুণ খেলোয়াড়। যাদের মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেজ। যিনি আবার বেশি বয়সী খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ডও ছুঁয়েছেন।
শুরু থেকেই গ্যালারিতে থাকা হলুদ জার্সিধারীদের সমর্থকরা ‘মেক্সিকান ওয়েভের’ সঙ্গে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলেন। তিতের শিষ্যদের পায়ে বল পরা মানেই গোলের স্বপ্ন দেখা। সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পারার হতাশায় পুড়তে হয়েছে তাদের।
স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে তখন রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখছিলেন দলের বড় তারকা নেইমার জুনিয়র। স্টেডিয়ামের বড় স্ক্রিনে তাকে দেখা গেলো কিছুটা বিচলিত। হয়তো নিজেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। দল তখন গোল পাচ্ছিল না। আর শেষ পরিণতিটা দেখে নিশ্চয়ই হতাশায় পুড়ছেন!
নিজেদের সুযোগ মিস। একজন যোগ্য ফিনিশারের অভাব। আর ক্যামেরুনের কাছে শেষ মুহূর্তের গোল হজম করে বড় বার্তা পেয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল– যেকোনও সময় প্রতিপক্ষকে হেলাফেলা করে একাদশ নামালে কী ফল হতে পারে।
এদিকে আফ্রিকান দলটি যেমন বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মতো দলকে প্রথমবারের মতো হারিয়ে অনন্য স্বাদ পেয়েছে। জিতেও তারা নক আউট পর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি। তাকে কী। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের হারানোর দারুণ সুখস্মৃতি যে তাদের এখন সঙ্গী।
তাই নক আউট পর্বের আগে তিতে যে বার্তা পেলেন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিশ্চয়ই সামনের দিকে দলকে সেভাবেই সাজাবেন। হেক্সা মিশনে এসে পা হড়কালেই তো শুধু চলবে না। এগিয়ে যাওয়ার যে কোনও বিকল্প নেই। নিশ্চয়ই নেইমার-রিচার্লিসনরা থাকবেন পরের ম্যাচে। দলকে আবারও আনন্দে ভাসানোর বারতা নিয়ে আসবেন। সেই অপেক্ষায় সমর্থকরা স্বপ্ন দেখতেই পারেন।