১৯৭৪ বিশ্বকাপে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। সেবার ইয়োহান ক্রুইফদের টোটাল ফুটবলের সামনে বিধ্বস্ত হয় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম সাক্ষাতেই ৪-০ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে পরাস্ত করে ডাচরা। ১৯৭৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে সেই নেদারল্যান্ডসকেই অতিরিক্ত সময়ে ৩-১ গোলে পরাজিত করে বিশ্বকাপ খেতাব নিয়ে দেশে ফেরেন মারিও কেম্পেসরা।
১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফের মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশ। আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে নেদারল্যাল্ডস। ২০০৬ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচে মাঠে নামে তারা। কিন্তু গোলশূন্য ড্র হয় সেই ম্যাচ। এরপর দীর্ঘ ৮ বছর পর ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সাক্ষাৎ। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ডাচদের পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনা।
৮ বছর পর কাতার বিশ্বকাপে ফের মুখোমুখি হতে চলেছে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। আজ শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় কোয়ার্টার ফাইনালে। এবার নিঃসন্দেহে ২০১৪-এর বদলা নিতে মরিয়া হয়ে উঠবেন লুই ভ্যান গালের ছাত্ররা। আর মেসিদের প্রচেষ্টা থাকবে বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত রাখার।
ডাচদের মেসিকে নিয়ে ভাবনা
মেসিকে আটকানোর পরিকল্পনা নাকি করে ফেলেছেন লুই ফন গাল। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপে পুরো ম্যাচে মেসিকে বল ধরতে দেইনি। তবু ম্যাচটা পেনাল্টিতে হেরেছিলাম। মেসি কতটা বিপজ্জনক সেটা আমরা সবাই জানি। তবে মেসি নিজে যে খুব একটা বল কেড়ে খেলার চেষ্টা করে, এমনটা নয়। এটা আমাদের সুবিধা। চেষ্টা থাকবে, নিজেদের পায়ে বল বেশি রাখতে, আর মেসিকে খেলা থেকে দূরে রাখতে।
মেসিকে আটকানোর দায়িত্ব থাকছে লিভারপুলের ডিফেন্ডার ভ্যান ডিকের কাছে। এর আগে অনেকবার মেসির মুখোমুখি হয়েছেন। ডিকের মতে, ‘মেসির বিরুদ্ধে খেলাটাই বড় ব্যাপার। সম্মানের। একমুহূর্তে ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারে। ও এমন একটা ফুটবলার, যে প্রতিপক্ষের আক্রমণের সময় কোথাও ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে। তারপর বল পায়ে পেলে হঠাৎ এমনভাবে গতি বাড়িয়ে আক্রমণ হানে, যা থামানো কঠিন হয়ে যায়। তাই মেসিকে আমার একার পক্ষে রোখা সম্ভব নয়। সবাই মিলেই ঝাঁপাতে হবে। কারণ, ম্যাচটা মেসির সঙ্গে আমার নয়, আর্জেন্টিনার সঙ্গে পুরো দলের।’
প্রতিশোধ নিতে চায় ডাচরা
২০১৪ সালে সেমিতে হারের প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ নেদারল্যান্ডস। শুক্রবার দিবাগত রাতে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে হবে এই মহারণ। আমেরিকাকে হারানোর পর থেকে নেদারল্যান্ডস দলের মেজাজ দেখে মনে হয়েছে, ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান। দলের কোচ লুই ফান বলেছেন, ‘আমি মনে করি এবার কাপ জেতার সম্ভাবনা প্রবল। আর তিনটি ম্যাচ জিতলেই তো সবার সব স্বপ্ন সত্যি হবে। টানা এক বছর সবাইকে বলে আসছি, ঠিকঠাক খেলতে পারলে আমরা বিশ্বকাপ নিয়েই দেশে ফিরবো।
নিখুঁত পরিকল্পনা নিয়ে নামবেন স্কালোনি
অন্যদিকে নিখুঁত পরিকল্পনা নিয়ে নামছেন মেসিদের কোচ লিওনেল স্কালোনিও। হার মানেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ। তাই ঘর আগলে আক্রমণে যাওয়ার কথা ভাবছেন স্কালোনি।
তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের সত্যিই কঠিন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে হবে। নেদারল্যান্ডসের ফুটবলাররা দুর্দান্ত। আরও ভালো ওদের কোচ। কঠিন লড়াই হবে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। কঠিন তো হবেই।’
তবে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী স্কালোনি, ‘মনে হয় দারুণ সুন্দর একটা ম্যাচ হবে। দুঃখের বিষয় হলো, একটা দলকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হবে। আশা করছি আমরাই পরের রাউন্ডে যাবো।’
ডি মারিয়া ও পল খেলবেন?
ইনজুরির কারণে গত ম্যাচে খেলতে পারেননি ডি মারিয়া। শোনা যাচ্ছে চোটে পড়েছেন মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডি পলও। তবে তারা সুস্থ আছেন বলেই জানান স্কালোনি। যদিও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলতে পারবেন— এই নিশ্চয়তা দেননি আর্জেন্টিনা কোচ।
তিনি বলেন, তারা (ডি মারিয়া ও পল) ঠিক আছে। অনুশীলনে তাদের দেখে লাইনআপ ঠিক করবো। কীভাবে খেলতে চাই সেটার ওপর ভিত্তি করেই আজ সিদ্ধান্ত নেবো আমরা। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দেখা যাবে মেসি ম্যাজিক?
জীবনের শেষ বিশ্বকাপ রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে যথারীতি তিনি ফারাক গড়ে দিলেন।। অস্ট্রেলিয়ার চাপ সরিয়ে দলকে জয়ের সরণিতে পৌঁছে দিলেন। সেমিতে পৌঁছাতেও এমন একটি মেসি মোমেন্ট প্রয়োজন পড়বে আলবেসিলেস্তদের।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে যেন তাই বললেন ফরোয়ার্ড আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টার, আমরা জানি লিও প্রত্যেক দিন চমকে দেয়। আমি বলবো এটা মেসিই। সে শুধু ম্যাচে নয়, বরং দারুণ ছন্দে থাকে অনুশীলনেও।
আজও নিশ্চয়ই মেসিকে এমন ছন্দেই চাইবেন বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী।